বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইলন মাস্কের ‘গ্রোক’ চ্যাটবটের তথ্য ফাঁস: এআই জগতে নতুন নিরাপত্তা সংকট?

  প্রতিনিধি ২১ অগাস্ট ২০২৫ , ৪:২২ পিএম প্রিন্ট সংস্করণ

ইলন মাস্কের ‘গ্রোক’ চ্যাটবটের তথ্য ফাঁস: এআই জগতে নতুন নিরাপত্তা সংকট?

ইলন মাস্কের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) স্টার্টআপ এক্সএআই (xAI) আবারও বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। সম্প্রতি এক চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদনে ‘ফোর্বস’ প্রকাশ করেছে যে, এক্সএআই-এর তৈরি গ্রোক (Grok) চ্যাটবটের লাখ লাখ ব্যক্তিগত কথোপকথন ব্যবহারকারীদের অজান্তেই গুগল সার্চে চলে এসেছে। এই ঘটনায় এআই চ্যাটবটের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রোক ব্যবহারকারীরা যখন কোনো চ্যাট ‘শেয়ার’ বোতামে ক্লিক করে, তখন সেটি একটি অনন্য ইউআরএল (URL)-এর মাধ্যমে অনলাইনে প্রকাশিত হয়ে যায়। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় ব্যবহারকারীদের কোনো ধরনের সতর্কতা বা গোপনীয়তাসংক্রান্ত নোটিশ দেওয়া হয় না। ফলে গুগল, বিং এবং ডাকডাকগো-এর মতো সার্চ ইঞ্জিনগুলো এই ইউআরএল-গুলোকে ইনডেক্স করে ফেলে, অর্থাৎ নিজেদের ডাটাবেজে যুক্ত করে নেয়। এর ফলস্বরূপ, ৩ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি গ্রোক চ্যাট প্রকাশ্যে চলে আসে।

এই ফাঁস হওয়া চ্যাটগুলোর মধ্যে রয়েছে নানা ধরনের কথোপকথন। কিছু চ্যাট ছিল সাধারণ অনুরোধ, যেমন: একটি টুইট লিখে দেওয়া। আবার কিছু চ্যাট ছিল অত্যন্ত সংবেদনশীল ও বিপজ্জনক। এর মধ্যে ফেন্টানিল বা বোমা তৈরির কৌশল, ম্যালওয়্যার কোডিং, এমনকি ইলন মাস্ককে হত্যার বিশদ পরিকল্পনা পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত ছিল।

ফাঁস হওয়া কথোপকথনগুলোতে ব্যক্তিগত তথ্যের ব্যাপক প্রকাশ ঘটেছে। ফোর্বসের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কিছু চ্যাটে ব্যবহারকারীরা নিজেদের নাম, ব্যক্তিগত তথ্য, পাসওয়ার্ড, এমনকি স্প্রেডশিট ও ছবিও আপলোড করেছেন। কেউ কেউ আবার নিজেদের চিকিৎসা ও মনস্তাত্ত্বিক সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন, যা সাধারণত একান্ত ব্যক্তিগত হিসেবে বিবেচিত হয়।

এই ঘটনা গ্রোকের নীতিমালা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। কিছু ফাঁস হওয়া চ্যাটে বর্ণবাদী ও অশ্লীল বিষয়বস্তু পাওয়া গেছে, যা এক্সএআই-এর নীতিমালার পরিপন্থী। তবুও, গ্রোকের মাধ্যমে মাদক তৈরি, আত্মহত্যার পরিকল্পনা ও ম্যালওয়্যার তৈরির নির্দেশনা প্রকাশ পেয়েছে, যা চ্যাটবটের সুরক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতাকে স্পষ্ট করে।

এই ঘটনার সঙ্গে মিল রয়েছে চলতি মাসের শুরুতে ঘটে যাওয়া চ্যাটজিপিটির একটি ঘটনার। সে সময় ওপেনএআই-এর কিছু চ্যাট গুগল সার্চে দেখা গিয়েছিল। তখন ওপেনএআই দ্রুত ত্রুটিটি ঠিক করে নেয় এবং তাদের প্রধান তথ্য নিরাপত্তা কর্মকর্তা ডেন স্টাকি এটিকে ‘একটি সংক্ষিপ্ত সময়ের পরীক্ষা’ বলে উল্লেখ করেন। সেই সময় ইলন মাস্ক ওপেনএআই-কে ব্যঙ্গ করে বলেছিলেন, ‘গ্রোক ফর দ্য উইন’। কিন্তু এখন গ্রোক নিজেই একই ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

এই দুই ঘটনা থেকে বোঝা যায়, এআই চ্যাটবট ব্যবহারে একটি নতুন ধরনের সংকট তৈরি হচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন আর শুধু কোড লেখা বা ইমেইল পাঠানোর মতো সাধারণ কাজে সীমাবদ্ধ নয়। মানুষ এখন এআই চ্যাটবটকে ব্যক্তিগত থেরাপিস্ট বা মনের কথা বলার নিরাপদ স্থান হিসেবেও ব্যবহার করছে। রেডিট ও ইনস্টাগ্রামে অনেকেই জানিয়েছেন, তারা চ্যাটজিপিটিকে ‘ভয়েস জার্নালিং’-এর জন্য ব্যবহার করেন, যেখানে তারা সম্পর্ক, দুঃখ এবং দৈনন্দিন মানসিক উদ্বেগ নিয়ে কথা বলেন। তারা মনে করেন, এটি একটি নিরপেক্ষ স্থান যেখানে কোনো বিচার ছাড়াই মনের কথা বলা যায়।

কিন্তু এই আত্মিক সম্পর্কের আড়ালে লুকানো ঝুঁকি সম্পর্কে অনেকেই সচেতন নন। ওপেনএআই-এর প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যান নিজেও চ্যাটজিপিটিকে থেরাপিস্ট হিসেবে ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, এই ধরনের কথোপকথনের ওপর কোনো আইনগত বা চিকিৎসাগত গোপনীয়তা প্রযোজ্য নয়। তাই, এআই চ্যাটবটের সঙ্গে আমাদের ব্যক্তিগত কথোপকথন কতটা নিরাপদ, তা নিয়ে এখন সবারই ভাবার সময় এসেছে।