প্রতিনিধি ২৫ অগাস্ট ২০২৫ , ৮:৫৮ এএম প্রিন্ট সংস্করণ
গত জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে নিহত ও আহত পরিবারের সদস্যরা রোববার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশে খুনিদের জামিনের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এ সময় তারা সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল এবং প্রধান উপদেষ্টার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরীর পদত্যাগের দাবি জানান। তাদের অভিযোগ, চিহ্নিত খুনিদের জামিনের ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না, বরং প্রতিবাদ করলে পুলিশি হামলার শিকার হতে হচ্ছে।
বেলা সাড়ে ১১টায় শুরু হওয়া এই কর্মসূচিতে শহীদ ও আহতদের ছবি সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে যোগ দেন অসংখ্য স্বজন। তাদের সঙ্গে ছিলেন জুলাই আন্দোলনে আহত কয়েকজন ব্যক্তিও। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে নিহত ইমাম হাসান তায়িমের বড় ভাই রবিউল হাসানের সঞ্চালনায় বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পরিবারের সদস্যরা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, হত্যাকারীদের এখনও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না, উল্টো হত্যা মামলার আসামিরা সহজেই জামিন পাচ্ছেন। সম্প্রতি শহীদ পরিবারের সদস্যদের ওপর পুলিশের হামলা নিয়েও তারা সরকারের নীরবতার সমালোচনা করেন।
রবিউল হাসান বলেন, “জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হত্যার বিচার নিয়ে টালবাহানা চলছে। উপদেষ্টারা শহীদ পরিবারের বেদনা ভুলে গেছেন।” একই অভিযোগ করেন জুলাই আন্দোলনে আহত শাহীন আহমেদ খান ও শেখ মুস্তাফিজ। তারা বলেন, “১৯ আগস্ট সচিবালয়ের সামনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের ওপর পুলিশ হামলা করলেও সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি জুলাই হত্যায় জড়িত একজন উপপরিদর্শককে (এসআই) জামিন দেওয়া হয়েছে।”
প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত স্বজনরা “দফা এক, এক দাবি, আইন উপদেষ্টার পদত্যাগ” এবং “আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে” স্লোগান দেন। তাদের কণ্ঠে ছিল বিচারহীনতার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা।
কর্মসূচি শেষে তারা মিছিল নিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দিয়ে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে অবস্থান নেন। সেখানে তারা ঘোষণা দেন যে, তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করা হবে। যদিও সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো আশ্বাস না পাওয়ায় তারা স্থান ত্যাগ করেন।
তারা আরও অভিযোগ করেন যে, সকালে প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে মিছিল শুরু করে সচিবালয়ের দিকে গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এরপর তারা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কার্যালয়ে গিয়ে নেতাদের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেন, কিন্তু কারও দেখা পাননি।
শহীদ ও আহত পরিবারের সদস্যদের এই প্রতিবাদ প্রমাণ করে, জুলাই আন্দোলনের ক্ষত এখনও তাজা। খুনিদের বিচার এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠার দাবি নিয়ে তাদের এই আন্দোলন চলছে। সরকারের পক্ষ থেকে অবিলম্বে এই বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে আন্দোলন আরও জোরদার হতে পারে বলে তারা হুঁশিয়ারি দেন। তাদের দাবি, বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং শহীদদের খুনিদের দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। একইসাথে, তারা আইন উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর পদত্যাগ দাবি করছেন, কারণ তারা মনে করেন এই উপদেষ্টারা ন্যায়বিচারের পথে বাধা সৃষ্টি করছেন। এই প্রতিবাদী আন্দোলন কেবল একটি পরিবারের নয়, বরং ন্যায়বিচার প্রত্যাশী সকল মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে।