“আপন আলোয় জ্বেলে ওঠো” এই লাইনটাতেই লোকানো অনেক কথা। আমাদের সমাজের বহু শিক্ষিত মায়েরাই পিরিয়ড নিয়ে কথা বলতে একটু অস্বস্তি বোধ করেন সেখানে অশিক্ষিত বা পিছিয়ে পড়া নারীদের নিয়ে বলার অপেক্ষায় রাখে না। ট্যাবু বলতে গেলে মহাবিশ্বটাই এক ট্যাবু। ট্যাবু ভাঙার জন্য যা লাগে তা হল প্রচুর মানসিক শক্তি।
সার্টিফিকেট ধারী ব্যাক্তি বলতে আমরা শিক্ষিত ধরি কিন্তু তারা কি সত্যিই শিক্ষিত? যে নিজের মাঝে আলো জ্বালাতে পারে নি সে কিভাবে শিক্ষিত? তার থেকে বরং মূর্খ অনেক ভালো। কেননা মূর্খকে বোঝালে বুঝবে। এ কথাগুলো বলার একটাই কারণ তা হলো, মায়েরা যদি মেয়েদের পিরিয়ডের সময় ধমক দিয়ে ঘরে আটকে রাখে তাহলে তা নিয়ে কথা বলবে কি করে? এরপর থাকে বাবা কিংবা ভাই। যে মেয়ে নিজের মাকে পিরিয়ডের কথা বললে শোনে,” ঘরে থাকো, ধর্মীয় প্রথায় এইকয়দিনের জন্য আসবে না” সে মেয়ে কি করে তার বাবাকে বা ভাইকে বলবে? কোন সাহসে বলবে?
নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গিকেপরিবর্তন আনতেই হবে। নারীর মুক্তি নারীর হাতেই। নারী যদি নিজের পিরিয়ড নিয়ে নিজের ঘরে কথা বলতে না পারে , সমাজে এ বিষয়ে খোলামেলাভাবে বলবে কি করে?
“ভাবী, অসুস্থ নাকি? কবে থেকে শুরু হয়েছে? আপনি এ অবস্থায় বাইরে না আসলেই হত।” পিরিয়ডের সময় টেম্পারেচার বাড়ে এটাতো সাধারণ একটা ব্যাপার, এটা কোনো অসুখ না। অসুস্থ কথাটার মাঝে যে ইঙ্গিতে আছে, সেটাই অসুস্থতা (মানসিক)।
স্কুল লেভেলে বহুবার শুনছি অনেকের অসুস্থতার কথা। তো আমার একটা বাজে অভিজ্ঞতা আছে। আমাকে স্কুলে যেতে হত বাসে করে। আমার সাথে আমার এক মেয়ে সহপাঠীও যেতো। ক্লাস এইটে একদিন ও স্কুলে আসে নি। রোল কলের সময় এক মেয়ে বলল, ও অসুস্থ। স্যার কিছু বললেন না। পরেরদিনও আসে নি।
তারপরের দিন বাসস্ট্যান্ডে ওকে দেখে বললাম, “সুস্থ হইছিস?”
“তুই এতটা ফাজিল!”
“ফাজলামির কি করলাম?”
“তুই জানিস না বুঝি মেয়েরা প্রতি মাসে এমন অসুস্থ হয়…” (হ্যাঁ, ওই সময় বুঝলাম পিরিয়ডের নাম মেয়েরা নিজেরাই রেখেছে “অসুস্থতা”)
পরে বলেছিলাম, “আমার বাড়িতে মা-দিদি-কাকী-পিসি সবাই আছে। কেউ কোনোদিন বলে নি অসুস্থতা মানে পিরিয়ড হওয়া। আমি মেয়েদের পিরিয়ড বলতে পিরিয়ডই বুঝি”
উপমহাদেশের প্রথম মহিলা ডাক্তার কাদম্বিনী দেবীর স্বামী দ্বারকানাথ গাঙ্গুলির সেই সুন্দর কথা-
“না জাগিলে সব ভারত ললনা
এ ভারত আর জাগে না জাগে না”
হ্যাঁ, নারীর পিরিয়ড নিয়ে নারীকেই খোলামেলা বলতে হবে।
নারীকে বলতে হবে তার মিডপেইনের কথা। ব্যাথা সহ্য না করতে পারলে ওষুধ খেতে হবে।
নারীকেই বলতে হবে,” আমার পিরিয়ড আমার মাতৃত্ব, আমার অহংকার।”