প্রতিনিধি ১৩ অগাস্ট ২০২৫ , ১১:১৩ এএম প্রিন্ট সংস্করণ
বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে, যা নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ওপর ভিত্তি করে। সম্প্রতি ইসির সভায় এই সুপারিশগুলোর কিছু অংশ অনুমোদন করা হয়েছে, যা নির্বাচন প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী ও স্বচ্ছ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের একজন সদস্যের মতে, ইসির এই সিদ্ধান্তগুলো ৮০ শতাংশ সন্তোষজনক এবং এর ফলে দেশের গণতন্ত্রের ভিত্তি আরও মজবুত হবে।
ইসির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা ফিরিয়ে আনা। আগে যেকোনো ধরনের অনিয়ম বা কারচুপির জন্য নির্বাচন কমিশন যেকোনো আসনের নির্বাচন বাতিল করতে পারত। এই ক্ষমতা ফিরিয়ে আনা হলে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ইসির নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব আরও বাড়বে, যা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য। এর পাশাপাশি, সশস্ত্র বাহিনীকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্তকেও একটি বড় পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা অনেক বেশি। তাই ভোটের সময় তাদের উপস্থিতি ভোটারদের মনে এক ধরনের নিরাপত্তা ও আস্থার অনুভূতি তৈরি করবে। এর ফলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
যদিও ইসির অনেক সিদ্ধান্তই ইতিবাচক, তবে কিছু ক্ষেত্রে অসামঞ্জস্যতা দেখা গেছে। সংস্কার কমিশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ ছিল ‘না’ ভোটের বিধান যুক্ত করা, যা সকল আসনে প্রযোজ্য হবে। কিন্তু ইসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, শুধুমাত্র যেখানে একক প্রার্থী থাকবে, সেখানে ‘না’ ভোটের ব্যবস্থা থাকবে। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সংস্কার কমিশনের সদস্য অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাঁর মতে, কোনো আসনে যদি একাধিক প্রার্থীও থাকেন, এবং ভোটারদের কাউকেই পছন্দ না হয়, তবে তাদের ‘না’ ভোট দেওয়ার অধিকার থাকা উচিত। পৃথিবীর যেসব দেশে ‘না’ ভোটের বিধান আছে, সেখানে এটি সবক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তাই ইসির এই আংশিক সিদ্ধান্তকে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
নির্বাচনে প্রতীক ব্যবহারের ক্ষেত্রেও একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুসারে, জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করলেও দলগুলোকে তাদের নিজস্ব প্রতীকে অংশ নিতে হবে। এটি একটি নৈতিক সিদ্ধান্ত, কারণ ছোট দলগুলো বড় দলের প্রতীক ব্যবহার করে অনৈতিকভাবে ভোট আদায়ের চেষ্টা করে। এখন থেকে এটি বন্ধ হবে এবং ভোটাররা দল ও প্রার্থীর পরিচয় সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা পাবে।
তবে সংস্কার কমিশনের আরেকটি প্রস্তাব ছিল, কোনো আসনে ৪০ শতাংশের কম ভোট পড়লে সেখানে পুনরায় নির্বাচন দিতে হবে। ইসি এই সুপারিশটি গ্রহণ করেনি। কমিশনের মতে, ইসির এই সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করা উচিত। কম ভোট পড়ার অর্থ হলো ভোটারদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ বা আস্থা কম। এমন পরিস্থিতিতে পুনর্নির্বাচনের ব্যবস্থা থাকলে নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রতি জনগণের আস্থা বাড়বে।
সব মিলিয়ে, নির্বাচন কমিশনের এই পদক্ষেপগুলো দেশের নির্বাচনব্যবস্থায় একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। যদিও কিছু ক্ষেত্রে আরও সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে, তবে বর্তমান সিদ্ধান্তগুলো গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।