খেলাধুলা

ফুটবলের নীরব নায়ক: রেফারিদের সেরা দশের তালিকায় যারা

  প্রতিনিধি ২০ অগাস্ট ২০২৫ , ১০:৪৫ এএম প্রিন্ট সংস্করণ

ফুটবলের নীরব নায়ক: রেফারিদের সেরা দশের তালিকায় যারা

ফুটবল মাঠে রেফারি এক রহস্যময় চরিত্র। তাঁরা সাধারণত পাদপ্রদীপের আলোয় আসেন না, যদি না তাঁদের কোনো বিতর্কিত বা নজরকাড়া সিদ্ধান্ত থাকে। তবুও, তাঁদের ভূমিকা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা সবাই স্বীকার করে। বছরের পর বছর ধরে, টুর্নামেন্টের পর টুর্নামেন্ট জুড়ে চাপের মুখে নিখুঁতভাবে ম্যাচ পরিচালনা করে এমন কিছু রেফারি তাঁদের দক্ষতা ও যোগ্যতায় নিজেদের সেরাদের কাতারে নিয়ে গেছেন। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ ফুটবল হিস্টোরি অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিকস (IFFHS) ফুটবলের সেরা রেফারিদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। চলুন, দেখে নেওয়া যাক এই শীর্ষ দশে কারা আছেন।

সেরা রেফারিদের তালিকায় উল্লেখযোগ্য কিছু নাম

ইতালির রেফারি নিকোলো রিজোলি-কে ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালের দর্শকরা হয়তো ভুলতে পারেননি। জার্মানি-আর্জেন্টিনার সেই শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে তিনি মারাকানা স্টেডিয়ামের মাঝমাঠে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এছাড়া, ২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালও তিনি পরিচালনা করেছিলেন। ২০০২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সিরি আ-তে কাজ করার সময় তিনি সাতবার বর্ষসেরা রেফারির পুরস্কার জিতেছিলেন।

কলম্বিয়ার অস্কার রুইজ তিনটি বিশ্বকাপে ম্যাচ পরিচালনার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, যা এক অসাধারণ কৃতিত্ব। তিনি ২০০২, ২০০৬ এবং ২০১০ সালের বিশ্বকাপে রেফারিং করেছেন। ফুটবলের বাইরে তিনি একজন আইনজীবী এবং শিক্ষক। রেফারিং থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল সংস্থা কনমেবলের রেফারি প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন এবং বর্তমানে মিসরীয় ফুটবলে রেফারিংয়ের তত্ত্বাবধানে আছেন।

তুরস্কের কুনিয়াত কাকির ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে ম্যাচ পরিচালনা করেছেন। দুটো আসরেই তিনি একটি করে সেমিফাইনালে বাঁশি হাতে ছিলেন। ২০১৫ সালে বার্সেলোনা-জুভেন্টাসের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালও তিনি পরিচালনা করেছিলেন। বর্তমানে তিনি জর্জিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের রেফারিং বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ডেনমার্কের পিটার মিকেলসেন-এর একটি বিশেষ রেকর্ড আছে। ১৯৯০ সালে যখন তিনি প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে ম্যাচ পরিচালনা করেন, তখন তিনি ছিলেন বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী রেফারি। পরবর্তীকালে তিনি ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপ এবং ১৯৯২ ও ১৯৯৬ সালের ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে রেফারিং করেন। তিনি দুইবার IFFHS বর্ষসেরা রেফারির পুরস্কারও জিতেছিলেন।

নেদারল্যান্ডসের বিয়োর্ন কুইপার্স দুটি বিশ্বকাপ এবং তিনটি ইউরোতে রেফারিং করেছেন, যার মধ্যে ২০২০ ইউরোর ইতালি-ইংল্যান্ড ফাইনালও অন্তর্ভুক্ত ছিল। ২০১৪ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালসহ দুটি ইউরোপা লিগের ফাইনালেও তিনি ম্যাচ পরিচালনা করেন। ফুটবলের বাইরে তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী এবং নেদারল্যান্ডসে কয়েকটি সুপারমার্কেটের মালিক।

ইংলিশ রেফারি হাওয়ার্ড ওয়েব ২০১০ সালে ফিফা বিশ্বকাপ এবং উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল পরিচালনা করে এক অনন্য রেকর্ড গড়েন। একই বছরে দুটি বড় টুর্নামেন্টের ফাইনাল রেফারিংয়ের এই কৃতিত্ব তাঁরই প্রথম। ২০১৪ সালে অবসর নিলেও তিনি এখনো প্রায়ই আলোচনায় থাকেন, কারণ বর্তমানে তিনি ইংলিশ পেশাদার ফুটবলের রেফারিদের প্রধান।

ডেনমার্কের কিম নিয়েলসেন মাত্র ২৫ বছর বয়সে ডেনিশ শীর্ষ লিগে রেফারিং শুরু করেছিলেন। তাঁর উচ্চতা ১.৯৬ মিটার হওয়ায় মাঠে তাঁকে সহজেই চেনা যেত। ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে ডেভিড বেকহামকে লাল কার্ড দেখানোর জন্য তিনি ব্যাপক আলোচিত হয়েছিলেন।

জার্মানির ফেলিক্স ব্রিখ ২০১৮ বিশ্বকাপে একটি পেনাল্টি না দেওয়ার কারণে তুমুল সমালোচিত হলেও সামগ্রিকভাবে তিনি একজন নামি রেফারি। IFFHS-এর চোখে তিনি ২০১০-২০ দশকের সেরা রেফারি। তাঁর মূল পেশা ডেন্টিস্ট হলেও রেফারিংয়ের জন্যই তিনি বিশ্বব্যাপী খ্যাতি পেয়েছেন।

একই দেশের মার্কাস মার্ক-ও একজন বিখ্যাত রেফারি। তিনি ২০০২ ও ২০০৬ সালের বিশ্বকাপে, ২০০৩ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এবং ২০০৪ সালের ইউরোর ফাইনালে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৯৯৫ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে ছয়বার জার্মানির বর্ষসেরা রেফারির খেতাব জিতেছিলেন।

অবশেষে, পিয়েরলুইজি কলিনা-র কথা না বললেই নয়। ১৯৯৮ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত টানা ছয় বছর তিনি IFFHS বর্ষসেরা রেফারি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০২ সালের ব্রাজিল-জার্মানি বিশ্বকাপ ফাইনাল এবং ১৯৯৯ সালের বায়ার্ন মিউনিখ-ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ফাইনাল পরিচালনা করা এই ইতালিয়ানকে অনেকে ‘রেফারিদের রেফারি’ হিসেবে সম্মান করেন। তিনি বর্তমানে ফিফার রেফারি কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এই নীরব নায়করা ফুটবলের মাঠের অপরিহার্য অংশ। তাঁদের সঠিক সিদ্ধান্ত, দক্ষতা এবং চাপের মুখে শান্ত থাকার ক্ষমতা খেলাটিকে আরও সুন্দর করে তোলে। তাঁরা তাঁদের কাজের মাধ্যমে ফুটবলের ইতিহাসে নিজেদের একটি স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছেন।