খেলাধুলা

ফুটবলে বসুন্ধরা কিংসের নতুন ইতিহাস: এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের চূড়ান্ত পর্বে!

  প্রতিনিধি ১৩ অগাস্ট ২০২৫ , ৯:৩৩ এএম প্রিন্ট সংস্করণ

ফুটবলে বসুন্ধরা কিংসের নতুন ইতিহাস: এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের চূড়ান্ত পর্বে!

দীর্ঘদিনের সংকট, স্বল্প প্রস্তুতি এবং প্রতিকূল আবহাওয়ার মাঝেও বসুন্ধরা কিংস দেশের ফুটবলকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেল। এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের প্লে-অফে সিরিয়ার শক্তিশালী দল আল কারামাহকে ১-০ গোলে হারিয়ে টুর্নামেন্টের চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের এই ক্লাবটি। গত মঙ্গলবার কাতারের দোহায় সুহাইম বিন হামাদ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে কিংসের জয়ের নায়ক ছিলেন নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড ইমানুয়েল সানডে।

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগের পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসের জন্য এই মৌসুমের শুরুটা ছিল বেশ চ্যালেঞ্জিং। নতুন কোচের সংকট, দেরিতে অনুশীলন শুরু হওয়া, এবং প্রধান কোচের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো সার্জিওর অনুপস্থিতি—সবকিছু মিলিয়ে ক্লাবটি এক অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। এমন পরিস্থিতিতে সহকারী কোচ সৈয়দ গোলাম জিলানী ভারপ্রাপ্ত কোচের দায়িত্ব নিয়ে দলকে নেতৃত্ব দেন। তার অধীনেই কিংস সিরিয়ার এই কঠিন বাধা অতিক্রম করে।

দলের প্রস্তুতিও ছিল নামমাত্র। ১০ জুন প্লে-অফ ম্যাচ খেলতে দোহায় পৌঁছানোর পর কিংস মাত্র দুদিনের পূর্ণাঙ্গ অনুশীলন করার সুযোগ পায়। দলের চার বিদেশি খেলোয়াড় এবং ইংল্যান্ড প্রবাসী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কিউবা মিচেলও একই দিনে দলের সাথে যোগ দেন। এত কম সময়ের মধ্যে দলের মধ্যে বোঝাপড়া তৈরি করাটা ছিল বেশ কঠিন। কিন্তু খেলার মাঠে দেখা গেল সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। দল হিসেবে বসুন্ধরা কিংসের পারফরম্যান্স ছিল প্রশংসনীয়, যা দেখিয়ে দেয় তাদের পেশাদারিত্ব ও দৃঢ়তা।

ম্যাচের শুরু থেকেই কিংস ছিল দারুণ ছন্দে। খেলার ৬ মিনিটের মাথায় গোল করে এগিয়ে যায় তারা। একটি কর্নার থেকে অধিনায়ক তপু বর্মণ বল বাড়ান মোহামেডান থেকে কিংসে আসা ইমানুয়েল সানডের দিকে। ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন এই নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড। পুরো স্টেডিয়ামে উপস্থিত প্রবাসী বাংলাদেশিরা তখন উল্লাসে ফেটে পড়েন।

ম্যাচ চলাকালীন কাতারের অসহনীয় গরমও ছিল বড় এক বাধা। রেফারিকে দুই অর্ধেই কুলিং ব্রেক দিতে বাধ্য হতে হয়। কিন্তু প্রতিকূল আবহাওয়াও কিংসের খেলোয়াড়দের মনোবল ভাঙতে পারেনি। প্রবাসী ফুটবলার কিউবা মিচেল, যিনি সান্ডারল্যান্ড থেকে কিংসে যোগ দিয়েছেন, দ্বিতীয় অর্ধে মাঠে নামেন। নতুন আবহাওয়া এবং দলের সাথে পরিচিত না হলেও তিনি দ্রুত মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন এবং তার নৈপুণ্যে দর্শক মুগ্ধ হন।

এই ঐতিহাসিক জয়ের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান ছিল গোলরক্ষক মেহেদী হাসান শ্রাবণের। তিনি দুই অর্ধে একাধিক নিশ্চিত গোল সেভ করে দলকে রক্ষা করেন। বিশেষ করে দ্বিতীয়ার্ধে যখন আল কারামাহ মুহুর্মুহু আক্রমণ করছিল, তখন শ্রাবণের অসাধারণ গোলকিপিং নৈপুণ্যে কিংসের জাল অক্ষত থাকে। ইনজুরিতে আঘাত পেলেও তিনি শেষ পর্যন্ত মাঠ ছাড়েননি এবং দলকে জয়ী করেই মাঠ ছেড়েছেন।

এই জয়ের মধ্য দিয়ে বসুন্ধরা কিংস এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করল। আগামী ২৫ অক্টোবর টুর্নামেন্টের ড্র অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে কিংস তাদের গ্রুপ এবং প্রতিপক্ষ সম্পর্কে জানতে পারবে। গত মৌসুমে সরাসরি মূল পর্বে খেললেও এবার প্লে-অফ জয়ের মধ্য দিয়ে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করে জায়গা করে নিতে হয়েছে। বসুন্ধরা কিংসের এই জয় দেশের ফুটবলের জন্য এক নতুন আশার আলো।