প্রতিনিধি ২৪ অগাস্ট ২০২৫ , ১১:৩৬ এএম প্রিন্ট সংস্করণ
রবিবার সকালে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। এই বৈঠকটি কেবল একটি সাধারণ কূটনৈতিক সাক্ষাৎ নয়, বরং দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। দীর্ঘদিন ধরে শীতল থাকা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বরফ গলাতে এই আলোচনা একটি বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বৈঠক শেষে দুই দেশের মধ্যে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো সরকারি ও কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের ভিসা বিলোপ সংক্রান্ত চুক্তি। এই চুক্তিটি কার্যকর হলে উভয় দেশের সরকারি কর্মকর্তা ও কূটনীতিকদের যাতায়াত অনেক সহজ হবে, যা দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বাড়াতে সহায়ক হবে।
এছাড়াও, পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের কথা রয়েছে। এই সমঝোতাগুলো বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে সাহায্য করবে। প্রথমত, দুই দেশের বাণিজ্যবিষয়ক যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের মাধ্যমে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে। বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম। এই ওয়ার্কিং গ্রুপ বাণিজ্য বৃদ্ধির নতুন উপায় খুঁজে বের করতে এবং বিদ্যমান বাধাগুলো দূর করতে কাজ করবে।
দ্বিতীয়ত, সংস্কৃতি বিনিময় বিষয়ক সমঝোতা স্মারকটি দুই দেশের জনগণের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সাংস্কৃতিক বন্ধন বাড়াতে সাহায্য করবে। গান, নাটক, শিল্পকলা এবং সাহিত্য বিনিময়ের মাধ্যমে দুই দেশের মানুষ একে অপরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারবে।
তৃতীয়ত, দুই দেশের ফরেন সার্ভিস একাডেমির মধ্যে সহযোগিতা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এর ফলে উভয় দেশের কূটনীতিকরা একে অপরের প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা থেকে উপকৃত হবেন। এটি কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও পেশাদার ও শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে।
চতুর্থত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থার মধ্যে সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা স্মারকটি সংবাদ ও তথ্য বিনিময়ের ক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। এর মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান আরও মসৃণ হবে এবং ভুল তথ্যের বিস্তার রোধ করা সম্ভব হবে।
পঞ্চমত, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (BIISS) ও পাকিস্তানের ইসলামাবাদ পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (IPRI)-এর মধ্যে সহযোগিতা বিষয়ক চুক্তিটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই দুই গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে জ্ঞান ও গবেষণা বিনিময়ের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ও কৌশলগত বিষয়ে উভয় দেশের নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বৈঠকের পর ইসহাক দারের সম্মানে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন একটি মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করবেন। এই ধরনের কূটনৈতিক আপ্যায়ন পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নে একটি ইতিবাচক বার্তা দেয়। সব মিলিয়ে, এই বৈঠকটি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে এক নতুন সম্পর্কের সূচনা করেছে। এটি শুধু কূটনৈতিক সম্পর্ক নয়, বরং জনগণের মধ্যেকার সম্পর্ককেও আরও গভীর করবে বলে আশা করা হচ্ছে।