জাতীয়

মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলা: সপ্তম দিনে সাক্ষ্যগ্রহণ, ১৬ জনের জবানবন্দি রেকর্ড

  প্রতিনিধি ২৪ অগাস্ট ২০২৫ , ১১:৫২ এএম প্রিন্ট সংস্করণ

মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলা: সপ্তম দিনে সাক্ষ্যগ্রহণ, ১৬ জনের জবানবন্দি রেকর্ড

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ঘটে যাওয়া আন্দোলনকে কেন্দ্র করে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে বিচারিক কার্যক্রম পুরোদমে চলছে। আজ, রোববার, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ এই মামলার সপ্তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিচারপতি মো: গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেলে এই সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

এই মামলাটি বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক ও বিচারিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন নিজের দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ায় মামলার গুরুত্ব আরও বেড়েছে।

আজকের সাক্ষ্যগ্রহণের আগে, গত ২০ আগস্ট ষষ্ঠ দিনের সাক্ষ্য-জেরা সম্পন্ন হয়। ওইদিন দুজন চিকিৎসকসহ মোট চারজন সাক্ষী তাদের জবানবন্দি দেন। তারা হলেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মাহফুজুর রহমান, সিনিয়র স্টাফ নার্স শাহনাজ পারভীন, ইবনে সিনা হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হাসানুল বান্না এবং শহীদ শেখ মেহেদী হাসান জুনায়েদের মা সোনিয়া জামাল। এই নিয়ে ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত মোট ১৬ জন সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে।

এর আগে, ১৮ আগস্ট পঞ্চম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণে শহীদ আস-সাবুরের বাবা মো: এনাব নাজেজ জাকি, শহীদ ইমাম হাসান তাইমের ভাই রবিউল আউয়াল এবং রাজশাহীর প্রত্যক্ষদর্শী জসিম উদ্দিন জবানবন্দি দেন। তাদের জেরা করেন শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো: আমির হোসেন।

এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয় গত ৩ আগস্ট, যখন মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলার সূচনা বক্তব্যের পর প্রথম সাক্ষী হিসেবে আহত খোকন চন্দ্র বর্মণ জবানবন্দি দেন। এর পর থেকে পর্যায়ক্রমে একাধিক সাক্ষী নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরছেন।

গত ১৭ আগস্ট আরও চারজন সাক্ষী তাদের বক্তব্য দেন। তারা হলেন সবজি বিক্রেতা আবদুস সামাদ, মিজান মিয়া, শিক্ষার্থী নাঈম শিকদার এবং শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা শাহীনা বেগম। এরও আগে ৬ আগস্ট রিনা মুর্মু ও সাংবাদিক একেএম মঈনুল হক এবং ৪ আগস্ট পঙ্গু হওয়া শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল ইমরান ও চোখ হারানো দিনমজুর পারভীন তাদের জবানবন্দি দেন।

মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গত ১০ জুলাই গঠন করা হয়। ট্রাইব্যুনাল তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ এনে বিচার শুরুর আদেশ দেন। এই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার, যার মধ্যে তথ্যসূত্র, জব্দতালিকা, দালিলিক প্রমাণাদি এবং শহীদদের তালিকার বিশদ বিবরণ রয়েছে। এই মামলায় মোট ৮১ জন সাক্ষীর জবানবন্দি নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এই অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা।

এই মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া এবং সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব দেশের আইনি ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এই ধরনের গুরুতর অভিযোগের বিচার শেষ পর্যন্ত কোন দিকে মোড় নেয়, তা জানতে দেশের সাধারণ মানুষ এবং রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।