প্রতিনিধি ২৫ অগাস্ট ২০২৫ , ৯:১৯ এএম প্রিন্ট সংস্করণ
চলতি আগস্ট মাসের প্রথম ২৩ দিনে দেশে এসেছে প্রায় ১৭৫ কোটি ডলারের প্রবাস আয়, যা দেশের অর্থনীতিতে এক নতুন গতি এনেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ে প্রবাসী বাংলাদেশিরা মোট ১৭৪ কোটি ৮৬ লাখ ২০ হাজার ডলার পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৩৩ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে)। এই বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে শক্তিশালী করছে এবং অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, আগস্টের এই ২৩ দিনে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৭ কোটি ৬০ লাখ ২৭ হাজার ডলার প্রবাস আয় এসেছে। এটি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেশ ভালো বৃদ্ধি। গত বছর একই সময়ে প্রতিদিন গড়ে ৭ কোটি ৪১ লাখ ৩৮ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। তবে, গত জুলাই মাসের দৈনিক গড় রেমিট্যান্সের (৮ কোটি ২৫ লাখ ৯৫ হাজার ডলার) চেয়ে তা কিছুটা কম। তবুও, প্রবাস আয়ের এই ধারাবাহিক প্রবাহ অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক ইঙ্গিত।
এই রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রধান উৎসগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে। তাদের মাধ্যমে এসেছে ১০৯ কোটি ৭১ লাখ ৬০ হাজার ডলার। এটি মোট আয়ের একটি বড় অংশ। এর পরেই রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো, যার মাধ্যমে এসেছে ৩৯ কোটি ২৯ লাখ ডলার। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো রাষ্ট্রায়ত্ত কৃষি ব্যাংক, যা একাই ২৪ কোটি ৯৭ লাখ ৬০ হাজার ডলারের বেশি প্রবাস আয় এনেছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৮৭ লাখ ৯০ হাজার ডলার।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর ব্যাপারে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ এবং প্রবাসীদের কঠোর পরিশ্রমের কারণেই এই প্রবৃদ্ধি সম্ভব হচ্ছে। ঈদ এবং বিভিন্ন উৎসবের আগে প্রবাসীরা সাধারণত বেশি অর্থ পাঠান। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আগস্ট মাসে ঈদুল আযহা ছিল, যার কারণে রেমিট্যান্সের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি এসেছে। এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে দেশের অর্থনীতিতে আরও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রবাস আয়ের এই শক্তিশালী ধারা শুধু দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভই বাড়ায় না, বরং দেশের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচল রাখতেও সাহায্য করে। এই অর্থ দিয়ে পরিবারগুলো তাদের দৈনন্দিন খরচ, সন্তানের শিক্ষা, চিকিৎসা এবং অন্যান্য জরুরি প্রয়োজন মেটায়। ফলে, সরাসরি দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো শক্তিশালী হয়। সামনেও প্রবাস আয়ের এই গতি অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা যায়, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।