আন্তর্জাতিক

শিকাগোতে সেনা মোতায়েন: ট্রাম্পের নতুন পদক্ষেপ, বিতর্ক তুঙ্গে

  প্রতিনিধি ২৪ অগাস্ট ২০২৫ , ১২:০০ পিএম প্রিন্ট সংস্করণ

শিকাগোতে সেনা মোতায়েন: ট্রাম্পের নতুন পদক্ষেপ, বিতর্ক তুঙ্গে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৃহত্তম শহর শিকাগোতে সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপ নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। অপরাধ, গৃহহীন এবং অনথিভুক্ত অভিবাসীদের দমনের জন্য ট্রাম্প কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই এই বিতর্কের সূত্রপাত। পেন্টাগন এই শহরে সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনা করছে বলে সম্প্রতি ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে। যদিও পেন্টাগন সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি, কিন্তু এই খবর রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

ওয়াশিংটন পোস্টের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে যে, পেন্টাগন কয়েক সপ্তাহ ধরে এই পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। এর মধ্যে একটি বিকল্প হলো আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে কয়েক হাজার ন্যাশনাল গার্ড সদস্যকে দ্রুত শিকাগোতে মোতায়েন করা। ট্রাম্প গত শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, “শিকাগোর অবস্থা ভয়াবহ। আমরা সেটি পরবর্তী সময়ে ঠিক করব।” একই সময়ে তিনি শহরটির মেয়রের কড়া সমালোচনা করেন।

পেন্টাগনের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, “ভবিষ্যৎ কোনো অভিযানের বিষয়ে আমরা আগে থেকে কিছু বলতে চাই না। প্রতিরক্ষা দফতর একটি পরিকল্পনামূলক সংস্থা, যা নিয়মিত অন্যান্য সংস্থার সাথে ফেডারেল সম্পদ ও কর্মীদের সুরক্ষায় কাজ করে।” এই বিবৃতিটি সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপের বিষয়টি নিশ্চিত না করলেও, পরিকল্পনা চলছে এমন ইঙ্গিত দিচ্ছে।

তবে ডেমোক্র্যাট দলের নেতা এবং ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের গভর্নর জেবি প্রিটজকার ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, শিকাগোতে সামরিক সহায়তার কোনো প্রয়োজন নেই এবং ফেডারেল সরকার থেকে এ বিষয়ে তাদের কোনোভাবে অবহিত করা হয়নি। প্রিটজকার ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগ এনেছেন। তার মতে, “ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি সংকট তৈরি করার চেষ্টা করছেন এবং সেনাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের কষ্ট থেকে মনোযোগ সরাতে চাইছেন।”

শিকাগোর মেয়র ব্র্যান্ডন জনসনের মুখপাত্র তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেননি, তবে গত শুক্রবার জনসন বলেছিলেন যে, শহর প্রশাসন এ ধরনের অবৈধ সেনা মোতায়েন নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। এই ধরনের সামরিক পদক্ষেপের ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেক বিশ্লেষক।

এর আগে, ট্রাম্পের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তিনটি রিপাবলিকান অঙ্গরাজ্যের গভর্নর রাজধানী ওয়াশিংটনে শত শত ন্যাশনাল গার্ড সদস্য পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। ট্রাম্প তখন দাবি করেছিলেন, ওয়াশিংটন অপরাধে ভরে গেছে। কিন্তু বিচার বিভাগীয় তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ওয়াশিংটনে সহিংস অপরাধের হার ছিল গত ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।

এই ঘটনাগুলো ট্রাম্প প্রশাসনের একটি প্যাটার্ন বা রাজনৈতিক কৌশলকে নির্দেশ করে। সমালোচকদের মতে, ট্রাম্প আইনশৃঙ্খলার দোহাই দিয়ে ফেডারেল ক্ষমতাকে ব্যবহার করতে চান এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চান। শিকাগোতে সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনা এই কৌশলেরই একটি অংশ বলে মনে করা হচ্ছে। একদিকে ট্রাম্প প্রশাসন অপরাধ দমনের কথা বলছে, অন্যদিকে বিরোধী পক্ষ এটিকে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে সমালোচনা করছে। এই বিতর্ক থেকে বোঝা যায়, শিকাগোর পরিস্থিতি আগামীতে আরও জটিল হতে পারে।