প্রতিনিধি ১১ অগাস্ট ২০২৫ , ১২:০৫ পিএম প্রিন্ট সংস্করণ
বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সাবেক একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তারের দেওয়া একটি বক্তব্য বর্তমানে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। গত বছর অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই প্রথম এতজন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ্যে এলো। আব্দুস সাত্তার সরকারের ৮ জন উপদেষ্টার ‘সীমাহীন দুর্নীতির’ প্রমাণ তার কাছে আছে বলে দাবি করেছেন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে অবিলম্বে এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে এবং অভিযোগকারীকে প্রমাণ জমা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। অন্যদিকে, বিএনপি এই বক্তব্যের দায় নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
গত শুক্রবার রাজধানীর একটি সেমিনারে এ বি এম আব্দুস সাত্তার, যিনি একাধারে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা ও বর্তমানে বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের সভাপতি, এই বিস্ফোরক মন্তব্যটি করেন। প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে তিনি বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের রক্তের ওপর দিয়ে চেয়ারে বসা অন্তত আটজন উপদেষ্টার সীমাহীন দুর্নীতির তথ্যপ্রমাণ দিতে পারব।’ একই সাথে তিনি গোয়েন্দা সংস্থার কাছেও এসব তথ্যপ্রমাণ আছে বলে দাবি করেন। তিনি আরও বলেন, একজন উপদেষ্টার এপিএসের অ্যাকাউন্টে ২০০ কোটি টাকা পাওয়া গেলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তার এই বক্তব্যে উপস্থিত কর্মকর্তারা হাততালি দিয়ে সমর্থন জানান বলে জানা গেছে।
আব্দুস সাত্তারের এই বক্তব্য সংবাদ মাধ্যমে আসার পর সরকারের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া আসে। শনিবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, এই অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং এটি জনগণের আস্থাকে ক্ষুণ্ন করতে পারে। বিবৃতিতে আব্দুস সাত্তারকে তার কাছে থাকা সব প্রমাণ যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে বলা হয়।
আশ্চর্যের বিষয় হলো, বিএনপি, যে দলের চেয়ারপার্সনের একান্ত সচিব ছিলেন আব্দুস সাত্তার, এই অভিযোগের দায় নিতে অস্বীকার করে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে বলেন, আব্দুস সাত্তারের এই বক্তব্যের দায় সম্পূর্ণ তার নিজের এবং এর সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের সততার ওপর আস্থা প্রকাশ করেন।
সরকার ও বিএনপির এই দুই বিপরীতমুখী অবস্থানের পর এখন সবার কৌতূহল আব্দুস সাত্তারের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে। শনিবার থেকেই তার ফোন বন্ধ থাকায় তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি এবং তিনি তার অভিযোগ প্রত্যাহারও করেননি। এখন প্রশ্ন উঠেছে, তিনি কি সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রমাণ জমা দেবেন, নাকি বিষয়টি এখানেই চাপা পড়ে যাবে?
দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন, যেহেতু একজন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেছেন, তাই তার উচিত দালিলিক প্রমাণ সরবরাহ করা। তিনি বলেন, মানুষেরও এসব তথ্য জানার অধিকার আছে। একই সুর শোনা গেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের কণ্ঠেও। তিনি বলেন, যদি অভিযোগকারী তথ্য-উপাত্ত না দেন, তাহলে ভবিষ্যতে দুর্নীতির অভিযোগের গুরুত্ব কমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে। এতে দুর্নীতিবিরোধী চলমান লড়াই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তবে এখন পর্যন্ত দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। যেহেতু দুদক একটি স্বাধীন সংস্থা, তাই তারা নিজ উদ্যোগেই এই অভিযোগের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয় কি না, তা দেখার বিষয়।
আব্দুস সাত্তার যে অভিযোগ তুলেছেন, তা বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একটি গুরুতর মোড় নিয়েছে। এই অভিযোগের সত্যতা এবং এর পরবর্তী পরিণতি কী হয়, তা সময়ই বলে দেবে। তবে এটি নিশ্চিত যে এই বিষয়টি রাজনৈতিক অঙ্গনে আরও অনেকদিন আলোচনার খোরাক জোগাবে।