প্রতিনিধি ২৪ অগাস্ট ২০২৫ , ১২:২১ পিএম প্রিন্ট সংস্করণ
ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একজন ঘনিষ্ঠ পুলিশকর্তাকে আটক করেছে। সাবেক সরকারের পতনের পর থেকে আওয়ামী লীগ-ঘনিষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া ধরপাকড় থেকে বাঁচতে তিনি অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ওই কর্মকর্তার নাম মোহাম্মদ আরিফুজ্জামান। গত শনিবার (২৩ আগস্ট) ভারতের উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগরের হাকিমপুরে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে লুকিয়ে থাকার সময় বিএসএফের বিশেষ গোয়েন্দা শাখা তাকে আটক করে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বহু আওয়ামী লীগ-ঘনিষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ধরপাকড় শুরু হয়। অভিযোগ রয়েছে, এই গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের আশঙ্কাতেই আরিফুজ্জামান সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তবে গোপন সূত্রের খবরের ভিত্তিতে বিএসএফ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর রাতে তাকে স্বরূপনগর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এই ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক মহলে তীব্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ১৭ আগস্ট থেকে আরিফুজ্জামানকে দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে।
স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তার এভাবে ধরা পড়া বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, সাবেক সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের ওপর চাপ কতটা বেড়েছে এবং তাদের মধ্যে পালানোর প্রবণতাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এই প্রথম নয়, এর আগেও বাংলাদেশের আরও কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ভারতে ধরা পড়েছেন। চলতি বছরের জুন মাসে একই জেলার জগদ্দল থেকে হাসান আরাফাত আবিদ নামে আরও একজন বাংলাদেশি পুলিশ সুপার এবং দুই আওয়ামী লীগ নেতাকে আটক করা হয়েছিল। তবে তারা বৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করায় পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
মোহাম্মদ আরিফুজ্জামানের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভিন্ন। কারণ তিনি কোনো বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়েছিলেন। এই ঘটনার ফলে দুই দেশের সীমান্ত নিরাপত্তা এবং অবৈধ অনুপ্রবেশের বিষয়গুলো আবার আলোচনায় উঠে এসেছে। বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকার এই বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়, তা এখন দেখার বিষয়। একই সঙ্গে, বাংলাদেশে সাবেক প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ভবিষ্যৎ নিয়েও নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই গ্রেপ্তারের ফলে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন।