জাতীয়

অবশেষে এমপিওভুক্ত হচ্ছে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা: শিগগিরই আসছে আদেশ

  প্রতিনিধি ১৪ অগাস্ট ২০২৫ , ১০:০৯ এএম প্রিন্ট সংস্করণ

অবশেষে এমপিওভুক্ত হচ্ছে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা: শিগগিরই আসছে আদেশ

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসাগুলোর জন্য সুখবর! দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা শিক্ষকদের আন্দোলন এবং দাবির প্রেক্ষিতে অবশেষে এমপিওভুক্তির আদেশ জারি হতে যাচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসাগুলোকে এমপিওভুক্ত করার জন্য ফাইল প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঠানো হয়েছে এবং খুব শিগগিরই এই আদেশ জারি করা হবে। বুধবার (১৪ আগস্ট, ২০২৫) সচিবালয়ে এডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ইরাব)-এর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ তথ্য জানান।

ড. খ ম কবিরুল ইসলাম বলেন, “আমি সচিব হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসাগুলোকে এমপিওভুক্ত করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছি। প্রধান উপদেষ্টার কাছে ফাইলটি পাঠানো হয়েছে এবং আশা করি, খুব দ্রুতই এমপিওভুক্তির আদেশ জারি হয়ে যাবে।” তার এই ঘোষণায় মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে বেতন-ভাতা না পাওয়া এবং অবহেলিত জীবনযাপন করা এই মাদরাসার শিক্ষকরা এ বছরের শুরুতে ব্যাপক আন্দোলন শুরু করেছিলেন। তাদের আন্দোলনের মুখে সরকার প্রথমে মাদরাসাগুলোকে এমপিওভুক্ত করার এবং পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণ করার ঘোষণা দেয়। এরপর গত ২৫ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা এমপিওভুক্তির নীতিমালা জারি করে। এই নীতিমালার অধীনে মাদরাসাগুলো এমপিওভুক্তির জন্য গত ৮ থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।

নতুন নীতিমালা অনুসারে, প্রতিটি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার মোট ছয়টি পদ এমপিওভুক্তির আওতায় আসবে। এর মধ্যে ইবতেদায়ি প্রধান শিক্ষকরা ১০ম গ্রেডে বেতন পাবেন, যা তাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। সাধারণ, বিজ্ঞান ও আরবি বিষয়ের সহকারী শিক্ষকরা বেতন পাবেন ১৩তম গ্রেডে। অন্যদিকে, ক্বারী বা নুরানি বিষয়ের সহকারী শিক্ষকরা ১৬তম গ্রেডে বেতন পাবেন। এছাড়াও, প্রতিটি মাদরাসায় একটি করে নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে, যার নাম ‘অফিস সহায়ক’। এই পদে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা ২০তম গ্রেডে বেতন পাবেন।

শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও নতুন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী, সহকারী শিক্ষক পদে এনটিআরসিএর সুপারিশের ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহায়ক পদে নিয়োগের জন্য মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। এতে শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হবে বলে আশা করা যায়।

ড. খ ম কবিরুল ইসলাম বেসরকারি মাদরাসার জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা সংশোধন প্রসঙ্গেও কথা বলেছেন। তিনি বলেন, “বেসরকারি মাদরাসার জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালার সংশোধনী প্রস্তাবটি উপদেষ্টার কাছে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে এটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য যাবে। অনুমোদন হয়ে আসলেই আমরা নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিওভুক্তির আওতায় আনতে পারব।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা মাদরাসাগুলোকে এমপিওভুক্ত করতে চাই। বিশেষ করে যেসব প্রতিষ্ঠান ২০০৬ সালের পূর্বে স্বীকৃতি লাভ করেছে কিন্তু আগের সরকার বৈষম্যমূলকভাবে তাদের এমপিও সুবিধা থেকে বঞ্চিত করেছে, সেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে এবার অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। আমরা আশা করছি, এই অর্থবছরেই এই কাজটি সম্পন্ন করতে পারব।” তিনি উল্লেখ করেন, ২০২২ সালের পর থেকে নতুন করে কোনো প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়নি, তাই এই উদ্যোগ মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে।

এই ঘোষণার ফলে দেশের হাজার হাজার স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষিকারা একটি স্থিতিশীল কর্মজীবনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। এমপিওভুক্তির পর তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে এবং তারা আরও মনোযোগ দিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে পারবেন। এটি বাংলাদেশের মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থায় একটি নতুন দিগন্তের সূচনা করবে বলে আশা করা যায়।