আন্তর্জাতিক

আমেরিকায় আবারও আটক কিলমার আব্রেগো গার্সিয়া, এবার উগান্ডায় নির্বাসনের আশঙ্কা

  প্রতিনিধি ২৬ অগাস্ট ২০২৫ , ৯:৪৯ এএম প্রিন্ট সংস্করণ

আমেরিকায় আবারও আটক কিলমার আব্রেগো গার্সিয়া, এবার উগান্ডায় নির্বাসনের আশঙ্কা

বাল্টিমোর, ২৫ আগস্ট, ২০২৫ – গত সোমবার সকালে বাল্টিমোরের মার্কিন অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগকারী সংস্থা (ICE)-এর অফিসে নিয়মিত হাজিরা দিতে গেলে ফের আটক হয়েছেন কিলমার আব্রেগো গার্সিয়া। তাঁর আইনজীবীরা আশঙ্কা করছেন, তাঁকে এবার এমন একটি দেশে নির্বাসন দেওয়া হতে পারে, যার সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই। আইনজীবীদের মতে, চাপ দিয়ে দোষ স্বীকার করাতে ব্যর্থ হয়েই প্রশাসন এই পদক্ষেপ নিচ্ছে।

চলতি বছরের মার্চ মাসে গার্সিয়াকে ভুল করে এল সালভাদরের এক কুখ্যাত কারাগারে নির্বাসিত করা হয়েছিল। পরে আদালতের হস্তক্ষেপে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসেন। কিন্তু এরপরই তাঁর বিরুদ্ধে মানব পাচারের অভিযোগ আনা হয়। গার্সিয়া এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং চাপ সত্ত্বেও দোষ স্বীকার করতে রাজি হননি। তাঁর আইনজীবীরা বলছেন, সরকার গার্সিয়াকে পুনরায় নির্বাসনের হুমকি দিচ্ছে, যাতে তিনি এই অভিযোগ স্বীকার করে নেন।

গার্সিয়ার আইনজীবী সায়মন স্যান্ডোভাল-মোশেনবার্গ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, গার্সিয়া একটি নতুন মামলা করেছেন, যাতে তাঁর বর্তমান আটকাদেশ এবং উগান্ডায় সম্ভাব্য নির্বাসন স্থগিত করা যায়। আদালত আপাতত বুধবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত গার্সিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে পাঠানো বা তাঁর আইনি অবস্থান পরিবর্তন করা থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছে।

আইনজীবীরা আরও জানান, গার্সিয়া যদি মানব পাচারের অভিযোগ স্বীকার করতেন, তবে তাঁকে কোস্টারিকায় পাঠানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, যা তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। সোমবার গার্সিয়া নিয়মিত হাজিরা দিতে গেলে ICE কর্মকর্তারা তাঁকে বিনা কারণে হঠাৎ আটক করেন। আইনজীবীদের অভিযোগ, গার্সিয়া আগে থেকেই অ্যাঙ্কল মনিটরিংয়ের অধীনে গৃহবন্দী ছিলেন, তাই তাঁকে আবার আটক করার কোনো যুক্তি নেই।

গার্সিয়ার আটকের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর তাঁর সমর্থকেরা বাল্টিমোর অফিসের বাইরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। তাঁদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা ও উদ্বেগ লক্ষ্য করা যায়। বিক্ষোভকারীরা আশঙ্কা করছেন, তাঁকে এমন একটি দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হতে পারে যার সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সচিব ক্রিস্টি নোম এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছেন যে গার্সিয়াকে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, “গার্সিয়া মানব পাচার ও গার্হস্থ্য নির্যাতনের মতো গুরুতর অপরাধে জড়িত। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কোনোভাবেই তাঁকে মার্কিন নাগরিকদের আতঙ্কিত করতে দেবেন না।”

হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সচিবের এই মন্তব্য গার্সিয়ার আইনজীবীদের দাবির সম্পূর্ণ বিপরীত। আইনজীবীরা বলছেন, গার্সিয়া নির্দোষ এবং তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আদালতের নতুন নির্দেশ এবং আইনজীবীদের লড়াই এখন গার্সিয়ার ভাগ্যের একমাত্র ভরসা। তবে ICE এবং সরকারের দ্রুত পদক্ষেপের কারণে গার্সিয়ার ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চয়তার মুখে।

এই ঘটনাটি মার্কিন অভিবাসন নীতির কঠোরতা এবং অভিবাসীদের আইনি অধিকার নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। গার্সিয়ার মামলা এখন আদালতের বিচারাধীন এবং পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য সবাইকে বুধবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।