অর্থনীতি

আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকে চাকরিচ্যুত কর্মকর্তাদের হামলা: ১৫ জন আহত, রণক্ষেত্রে রূপ নেয় দৈনিকবাংলা মোড়

  প্রতিনিধি ৯ অগাস্ট ২০২৫ , ৮:৩৪ এএম প্রিন্ট সংস্করণ

আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকে চাকরিচ্যুত কর্মকর্তাদের হামলা

ঢাকা: আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের চাকরিচ্যুত কর্মকর্তাদের আকস্মিক হামলায় ব্যাংকটির মানব সম্পদ বিভাগের প্রধানসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত অবস্থায় দুজন কর্মকর্তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আজ বিকালে দৈনিকবাংলা মোড়ে অবস্থিত ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। চাকরিচ্যুত কর্মকর্তাদের টানা আন্দোলনের মুখে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয় গত আট কার্যদিবস ধরে কার্যত অচল রয়েছে। এ ঘটনায় পল্টন থানায় একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

হামলার বিস্তারিত

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আন্দোলনকারীদের অবরোধের কারণে ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ কাজ পরিচালনার জন্য পার্শ্ববর্তী সুরমা টাওয়ারে অস্থায়ী কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছিল। আজ বিকাল ৪টার দিকে তিনজন ডিএমডি এবং এইচআর হেড আমির হোসেনসহ কয়েকজন কর্মকর্তা সুরমা টাওয়ার থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার সময় কয়েকশ আন্দোলনকারী লাঠি-সোটা নিয়ে তাদের ঘিরে ধরেন। তারা এইচআর হেড আমির হোসেনকে বেধড়ক মারধর করেন। কর্মকর্তাদের উদ্ধার করতে আসা নিরাপত্তা রক্ষীদেরও পিটিয়ে আহত করা হয়। এই হামলার ফলে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

আহতদের মধ্যে এইচআর হেড আমির হোসেনকে স্কয়ার হাসপাতালে এবং নিরাপত্তা রক্ষী শাহিনুরকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া, আরও ১৩ জন আহতকে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হামলাকারীদের হাত থেকে ব্যাংকের তিনজন ডিএমডিকে পুলিশ নিরাপদে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

নিয়োগ দুর্নীতি ও চাকরিচ্যুতির প্রেক্ষাপট

ব্যাংকটি যখন এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল, তখন কর্মী নিয়োগে নজিরবিহীন দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন তদারকি সংস্থার তদন্তে এই দুর্নীতির বিষয়টি সামনে আসে। নিয়মবহির্ভূতভাবে এবং প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ৬ শতাধিক কর্মকর্তাকে সরাসরি তৎকালীন চেয়ারম্যানের দপ্তর থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়, যার অনুমোদন ম্যানেজমেন্ট থেকে নেওয়া হয়নি।

৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর এই দুর্নীতির তদন্ত শুরু হয় এবং ১৪১৪ জন চিহ্নিত কর্মকর্তার মূল্যায়ন পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরীক্ষায় অকৃতকার্য ৫৪৭ জনকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে বাধ্য হয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকেই চাকরিচ্যুত কর্মকর্তারা আন্দোলন শুরু করেন। গত ২৮ জুলাই থেকে তারা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের প্রবেশপথ অবরুদ্ধ করে রেখেছেন, যার ফলে ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অবস্থান

পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আন্দোলনের শুরু থেকেই তাদের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কঠোর কোনো নির্দেশনা না থাকায় আন্দোলনকারীদের সরাতে কোনো শক্তি প্রয়োগ করা হয়নি। তবে গোয়েন্দা সূত্র বলছে, এর আগে অন্য চারটি ব্যাংকে এমন পরিস্থিতি শক্ত হাতে মোকাবিলা করা হলেও আল-আরাফাহ্ ব্যাংকের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ মানবিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে।

তবে আন্দোলনকারীদের দাবি, তাদের কোনো নোটিশ ছাড়াই অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে এবং চাকরি ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে। অন্যদিকে, ব্যাংকের মানব সম্পদ বিভাগ জানিয়েছে, যথাযথ নিয়ম মেনেই মূল্যায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে এবং এই সংস্কার প্রক্রিয়ায় সরাসরি রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো জড়িত। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, কিছু গোষ্ঠী এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে গোটা ব্যাংকিং খাতকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তবে বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রয়েছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।