প্রতিনিধি ৯ অগাস্ট ২০২৫ , ৯:৫৯ এএম প্রিন্ট সংস্করণ
বহু প্রতীক্ষিত ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি কি এবার হতে চলেছে? এই প্রশ্নই এখন বিশ্বজুড়ে সবার মুখে মুখে। কারণ, ১৫ আগস্ট শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আলাস্কায় বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রুশ হামলার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এই যুদ্ধ অবসানের পথ খুঁজে বের করতেই তাদের এই আলোচনা।
নির্বাচনী প্রচারের সময় ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় আসার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিনি ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করবেন। তবে ক্ষমতায় আসার পর প্রথম কয়েক মাসে একাধিক শান্তি আলোচনা, কূটনৈতিক সফর এবং ফোনালাপ সত্ত্বেও যুদ্ধ বন্ধে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। শুরুতে পুতিনকে কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় রাজি করানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে এখন ট্রাম্প অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে তাকে যুদ্ধ বন্ধে বাধ্য করতে চাইছেন। এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্প ও পুতিনের এই মুখোমুখি বৈঠক নতুন আশার জন্ম দিয়েছে।
ট্রাম্প তার নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এই বৈঠকের ঘোষণা দেন। পরে ক্রেমলিনও তা নিশ্চিত করে। তবে এই আলোচনার জন্য কেন আলাস্কাকে বেছে নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে অনেকের মধ্যে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। ১৮৬৭ সালে রাশিয়া এই অঞ্চলটি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিক্রি করে দিয়েছিল। কৌশলগত দিক থেকে আলাস্কার পশ্চিম প্রান্ত রাশিয়ার পূর্বতম অংশের খুব কাছেই অবস্থিত। ক্রেমলিনের মুখপাত্র ইউরি উশাকভ এই স্থান নির্বাচনের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেছেন, আলাস্কা ও আর্কটিক এমন অঞ্চল, যেখানে দুই দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থের মিল রয়েছে এবং পারস্পরিক লাভজনক প্রকল্পের সম্ভাবনাও বিদ্যমান।
তবে এই স্থান নির্বাচনের পেছনে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। পুতিনের বিরুদ্ধে আইসিসির গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকায় তিনি আইসিসির সদস্য রাষ্ট্রগুলোতে ভ্রমণ করতে পারেন না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র আইসিসির সদস্য না হওয়ায় সেখানে পুতিনের গ্রেফতার হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই।
ট্রাম্পের পক্ষ থেকে একটি বিতর্কিত প্রস্তাবের ইঙ্গিত এসেছে। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “ইউক্রেন ও রাশিয়া—উভয়ের মঙ্গলের জন্য কিছু এলাকা অদলবদল করা হবে।” যদিও তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি, তবে এই মন্তব্যটি নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনেকের মনেই প্রশ্ন, এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি উপস্থিত থাকবেন কি না। যদিও জেলেনস্কি এই বৈঠককে ত্রিপক্ষীয় করার চেষ্টা করছেন, তবে পুতিন জেলেনস্কির সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করতে রাজি নন। তিনি মনে করেন, পুতিন-জেলেনস্কি সাক্ষাৎ কেবল শান্তিচুক্তির “শেষ ধাপে” হতে পারে, যখন উভয় পক্ষ সব শর্তে একমত হবে। ট্রাম্পও এ বিষয়ে স্পষ্ট করে বলেছেন, পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের জন্য জেলেনস্কির উপস্থিতি বাধ্যতামূলক নয়।
ট্রাম্প ও পুতিনের এই বৈঠককে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের দিকে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে এই আলোচনা কতটা ফলপ্রসূ হবে এবং শেষ পর্যন্ত একটি দীর্ঘস্থায়ী শান্তিচুক্তি সম্ভব হবে কি না, তা জানতে আমাদের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।