আন্তর্জাতিক

ইরানি অস্ত্র কারখানার গোপন রহস্য: বিশ্বের কোন কোন দেশে তৈরি হচ্ছে ইরানের সামরিক সরঞ্জাম?

  প্রতিনিধি ২৪ অগাস্ট ২০২৫ , ১০:১৬ এএম প্রিন্ট সংস্করণ

ইরানি অস্ত্র কারখানার গোপন রহস্য: বিশ্বের কোন কোন দেশে তৈরি হচ্ছে ইরানের সামরিক সরঞ্জাম?

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নিজস্ব অস্ত্র উৎপাদন কারখানা স্থাপন করেছে বলে দাবি করেছে ইরান। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদেহ সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছেন। যদিও তিনি কোন কোন দেশে এসব কারখানা তৈরি করা হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানাতে অস্বীকার করেছেন, তবে তার এই মন্তব্য আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক কৌতূহল সৃষ্টি করেছে। এই খবরটি নিশ্চিত করেছে সংবাদমাধ্যম ইরান ইন্টারন্যাশনাল।

শুক্রবার (২২ আগস্ট) রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নাসিরজাদেহ বলেন, “আমরা কয়েকটি দেশে অস্ত্র কারখানা স্থাপন করেছি। তবে আপাতত সেসব দেশের নাম প্রকাশ করব না।” তার এই মন্তব্য ইরানের ক্রমবর্ধমান সামরিক সক্ষমতা এবং কৌশলগত বিস্তৃতির ইঙ্গিত দেয়। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ইরান নিজেদের সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থাকে আরও বিকেন্দ্রীকরণ করতে চাইছে, যাতে কোনো একটি নির্দিষ্ট দেশ বা অঞ্চলের উপর নির্ভরতা কমে।

ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও জানান, ইসরায়েলের সঙ্গে সাম্প্রতিক সামরিক সংঘাতের পর তাদের সামরিক অগ্রাধিকার কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে ইরান ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়নকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এলেও, এখন অন্যান্য সামরিক প্রযুক্তির উপরও তারা মনোযোগ দেবে। নাসিরজাদেহ বলেন, খুব শিগগিরই এই কারখানাগুলোর অবস্থান জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে। এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি প্রকারান্তরে বিশ্বকে একটি বার্তা দিয়েছেন যে, ইরান গোপনে তাদের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করে চলেছে এবং এই সক্ষমতা এখন আর কেবল দেশের অভ্যন্তরে সীমাবদ্ধ নয়।

এই সাক্ষাৎকারে নাসিরজাদেহ গত এক বছরে ইরানের সামরিক সাফল্যের আরও কিছু তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ইরান সফলভাবে নতুন ধরনের ওয়ারহেড পরীক্ষা করেছে। এই ওয়ারহেডগুলো আধুনিক ও গতিশীল, যা ইরানের সামরিক সক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করবে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও দাবি করেন, যদি জুন মাসের সামরিক সংঘাত ১৫ দিন ধরে চলত, তাহলে ইসরায়েলি বাহিনী ইরানের কোনো ক্ষেপণাস্ত্রই প্রতিহত করতে পারত না। তার মতে, এ কারণেই শেষ পর্যন্ত ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে যেতে বাধ্য হতে হয়েছে।

নাসিরজাদেহ আরও জানান, সাম্প্রতিক সংঘাতে ইরান তাদের সবচেয়ে নিখুঁত ও উন্নত অস্ত্র ‘কাসেম বাসির’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেনি। গত মে মাসে উন্মোচিত এই মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রটির পাল্লা প্রায় ১,২০০ কিলোমিটার। এতে উন্নত নির্দেশিকা এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা যুক্ত করা হয়েছে, যা এটিকে অত্যন্ত কার্যকর করে তুলেছে। ইরান এই ক্ষেপণাস্ত্রটি ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কারণ তারা হয়তো আরও বড় কোনো সংঘাতের জন্য এই উন্নত অস্ত্রটি সংরক্ষণ করতে চেয়েছিল।

ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এই ঘোষণা আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ও সামরিক অঙ্গনে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে, যেখানে ইরান ও তার প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর মধ্যে উত্তেজনা সবসময়ই বিদ্যমান। এই নতুন তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্ব এখন ইরানের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে তাকিয়ে আছে। কোন কোন দেশে এই গোপন অস্ত্র কারখানাগুলো অবস্থিত এবং এই উদ্যোগের পেছনে ইরানের দীর্ঘমেয়াদী কৌশল কী, তা জানতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে সবাই।