প্রতিনিধি ৯ অগাস্ট ২০২৫ , ১:৩১ পিএম প্রিন্ট সংস্করণ
ভারতের মানবাধিকারকর্মীরা দেশটির সরকার ও রাজনীতিবিদদের প্রতি অবিলম্বে ইসরায়েলে সব ধরনের অস্ত্র বিক্রি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁদের সতর্কবার্তা, গাজায় চলমান যুদ্ধে ইসরায়েলের প্রধান অস্ত্র প্রস্তুতকারকদের কাছে অস্ত্র উপাদান সরবরাহ করে ভারতের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিপুল আর্থিক মুনাফা করছে। বেঙ্গালুরু ফর জাস্টিস অ্যান্ড পিস (বিএফজেপি) নামে একটি সংগঠন সম্প্রতি সংসদ সদস্যদের কাছে লেখা একটি খোলা চিঠিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, বেঙ্গালুরুর অন্তত নয়টি প্রতিষ্ঠান ইসরায়েলের শীর্ষস্থানীয় অস্ত্র প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান যেমন—এলবিট সিস্টেমস, ইসরাইল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ এবং রাফায়েল অ্যাডভান্সড ডিফেন্স সিস্টেমসকে অস্ত্র তৈরি করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সরবরাহ করছে। মিডল ইস্ট আইয়ের শুক্রবার (৮ আগস্ট) প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এই খবর জানা যায়। বিএফজেপি, যা দক্ষিণ ভারতের প্রায় দুই ডজন সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত, সংসদ সদস্যদের প্রতি ফিলিস্তিনিদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে ইসরায়েলের ওপর অবিলম্বে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা জারির আহ্বান জানিয়েছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিজে) গাজায় ইসরায়েলের সম্ভাব্য গণহত্যার রায় দেওয়ার পরও ভারতীয় কোম্পানিগুলো অস্ত্র উপাদান পাঠানো চালিয়ে যাচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন এবং সাংবিধানিক নীতির পরিপন্থী। সেন্টার ফর রিসার্চ অন মাল্টিন্যাশনাল কর্পোরেশনস (সোমো)-এর তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর ২০২৩ থেকে এপ্রিল ২০২৫ পর্যন্ত সাসমস এইচইটি টেকনোলজিস লিমিটেড প্রায় ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অস্ত্র উপাদান চারটি ইসরাইলি প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করেছে।
মানবাধিকারকর্মীদের দাবি, গাজায় অবরোধের কারণে সৃষ্ট অনাহারে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৯৭ জন মারা গেছে। যুদ্ধের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৬১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৮ হাজার ৪৩০ শিশু। দেড় লাখেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন এবং গাজার সমগ্র জনসংখ্যাই এখন দুর্ভিক্ষের মুখে পড়েছে। মানবাধিকারকর্মীরা বলেছেন, জার্মানির মতো ভারতকেও ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধের পথে হাঁটতে হবে।
তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারত ও ইসরায়েলের মধ্যে বাণিজ্য ও গবেষণার সম্পর্ক ২০২৩ সাল থেকে আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে এবং তা এখন ‘কৌশলগত অংশীদারত্ব’-এর পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই পরিস্থিতিতেও দেশের ভেতরে ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলন দমন সত্ত্বেও কর্মীরা জানিয়েছেন যে তারা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। বিখ্যাত লেখক ও কর্মী অরুন্ধতী রায়সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এর আগেও সরকারকে ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছিলেন, কারণ তাদের মতে এই গণহত্যার সঙ্গে ভারতের নাম চিরদিনের জন্য যুক্ত হয়ে যাবে।