প্রতিনিধি ২৩ অগাস্ট ২০২৫ , ১০:৪৪ এএম প্রিন্ট সংস্করণ
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া জুলাই অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেছেন, এই জীবন উৎসর্গ করা হয়েছে একটি সুন্দর ও স্বচ্ছ দেশ গড়ার জন্য। তিনি দেশের প্রচলিত নির্বাচন ব্যবস্থার কঠোর সমালোচনা করে বলেন, এই পদ্ধতি কালো টাকা, পেশিশক্তি এবং ভোট জালিয়াতির সুযোগ তৈরি করে, যা দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার ও চাঁদাবাজির মতো অপরাধের জন্ম দেয়। তাই দেশের ভবিষ্যৎ রক্ষায় পিআর (ভোটের অনুপাত) পদ্ধতিতে নির্বাচন দেওয়া এখন জরুরি।
শুক্রবার (২২ আগস্ট) রাজধানীর শাহবাগে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক ছাত্র সমাবেশে চরমোনাই পীর এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, একটি সুস্থ ও গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনে স্বচ্ছ নির্বাচন ব্যবস্থা অপরিহার্য। বর্তমানে যে পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়, তা জনগণের প্রকৃত ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটায় না। এর পরিবর্তে পিআর পদ্ধতি চালু হলে প্রতিটি ভোটের গুরুত্ব বাড়বে এবং ক্ষুদ্র দলগুলোরও সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ তৈরি হবে। এতে করে রাজনৈতিক বৈচিত্র্য বাড়বে এবং দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন আরও গতিশীল হবে।
চরমোনাই পীর তাঁর বক্তব্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে গণভোটের মাধ্যমে জনগণের পিআর পদ্ধতির প্রতি আগ্রহ যাচাই করার আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, “নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার এবং জুলাই গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান হতে হবে।” শিক্ষার্থীদের আত্মত্যাগ যেন বৃথা না যায়, সেজন্য এই দুটি বিষয়কে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।
সমাবেশে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে সাত দফা ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে—শিক্ষাব্যবস্থার মৌলিক সংস্কার, পিআর ভিত্তিক নির্বাচন, জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের আইনি ভিত্তি, নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন, জুলাই গণহত্যার বিচার এবং চাঁদাবাজি বন্ধ। এই দাবিগুলো দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও শিক্ষাক্ষেত্রে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।
এই সমাবেশে ইসলামী আন্দোলনের নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীমও বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, মৌলবাদ নিয়ে তার বক্তব্য এবং তারেক রহমান ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্যে মূলত কোনো পার্থক্য নেই। তিনি আরও মন্তব্য করেন, যারা আজ মৌলবাদের সমালোচনা করছেন, তারা একসময় ডানপন্থীদের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। তার এই বক্তব্য রাজনৈতিক মহলে নতুন আলোচনার জন্ম দিতে পারে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ মাদানী এবং মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। তাদের বক্তব্যেও দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের দাবিসমূহের প্রতি সমর্থন জানানো হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চরমোনাই পীরের এই বক্তব্য একটি নতুন রাজনৈতিক বিতর্কের সূচনা করতে পারে। দেশের প্রচলিত নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চললেও, পিআর পদ্ধতির মতো একটি নির্দিষ্ট বিকল্প প্রস্তাব এই প্রথম বড় কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সামনে আনা হলো। এটি দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে কোন দিকে নিয়ে যায়, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।