জাতীয়

ক্ষমতাবানদের মামলা প্রত্যাহার, শ্রমিকদের প্রতি অবহেলা: অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন আনু মুহাম্মদের

  প্রতিনিধি ৯ অগাস্ট ২০২৫ , ১২:৫১ পিএম প্রিন্ট সংস্করণ

ক্ষমতাবানদের মামলা প্রত্যাহার, শ্রমিকদের প্রতি অবহেলা: অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন আনু মুহাম্মদের

অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্তিতে তাদের দায়িত্ব ও ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য আনু মুহাম্মদ। তার মতে, ক্ষমতাবানদের মামলা দ্রুত প্রত্যাহার করা হলেও শ্রমিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হাজার হাজার মামলার ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি নেই। এটি সরকারের বৈষম্যমূলক নীতির সুস্পষ্ট প্রতিফলন।

শনিবার (৯ আগস্ট) রাজধানীর বিজয়নগরে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম মিলনায়তনে ‘গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি’ আয়োজিত এক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে আনু মুহাম্মদ এসব কথা বলেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ ক্ষমতাবানদের মামলা দ্রুত তুলে নিলেও শ্রমিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ২০ হাজারেরও বেশি মামলার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।” এটি সরকারের পক্ষপাতমূলক আচরণের একটি বড় উদাহরণ।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ মনে করেন, গত এক বছরে সরকারের আমলে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি বা সাধারণ মানুষের জীবনে তেমন কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আসেনি। বিশেষ করে জুলাই আন্দোলনের সময় যারা আহত, নিহত বা নিখোঁজ হয়েছিলেন, তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ এবং পরিবারগুলোর দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতা স্পষ্ট। তিনি বলেন, এই ধরনের জরুরি বিষয়ে সরকারের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দৃশ্যমান।

একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে সরকারের নিরপেক্ষতা অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেন তিনি। আনু মুহাম্মদ বলেন, “সরকার যদি সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা না করে এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ঢেলে সাজানোর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নতুন করে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।” তিনি সরকারকে মব ভায়োলেন্সের মাধ্যমে মাজার, ভাস্কর্য ভাঙচুর ও হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। কারণ, সরকার অনেক ক্ষেত্রে এই ধরনের ঘটনাকে ‘প্রেসার গ্রুপ’ হিসেবে কাজ করছে বলে সাফাই গাইছে, যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।

এছাড়াও, তিনি ৭৪-এর বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল না করা এবং বিগত সরকারের বিভিন্ন নিবর্তনমূলক আইন বাতিলের দাবিতে সরকারের নিষ্ক্রিয়তার সমালোচনা করেন। রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য বিভিন্ন কমিশন গঠন করা হলেও শিক্ষা ও সংস্কৃতি নিয়ে কোনো কমিশন না থাকায় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তবে, ছাত্রসংসদ নির্বাচনের দাবি পূরণের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় কিছুটা আশার আলো দেখছেন তিনি। তিনি সতর্ক করে বলেন, “শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনেকে ছাত্রলীগের মতো আচরণ করতে চায়, যা একটি অশনিসংকেত।”

আনু মুহাম্মদের এই বক্তব্য অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ডের ওপর একটি কঠোর মূল্যায়ন, যেখানে তিনি সরকারের পক্ষপাতমূলক আচরণ, জনগণের প্রতি অবহেলা এবং রাষ্ট্রীয় সংস্কারে অসম্পূর্ণতার দিকগুলো তুলে ধরেন।