প্রতিনিধি ২৫ অগাস্ট ২০২৫ , ৯:২৬ এএম প্রিন্ট সংস্করণ
গাজা, ফিলিস্তিন: ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর লাগাতার হামলায় প্রাণহানি আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। গত সোমবার (২৫ আগস্ট) একদিনেই ইসরায়েলি হামলায় ৫১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে শুধুমাত্র গাজা শহরেই মারা গেছেন ২৭ জন। একই দিনে মানবিক সহায়তা নিতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও ২৪ জন। এই ঘটনায় মানবিক বিপর্যয় আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ৬ আগস্ট গাজায় সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে সেখানকার জেতুন ও সাবরা মহল্লায় এক হাজারেরও বেশি ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, এখনো শত শত মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে। সংস্থাটির দাবি, লাগাতার বোমা হামলা এবং রাস্তাঘাট অবরুদ্ধ থাকায় উদ্ধারকারী দলগুলো অধিকাংশ এলাকায় পৌঁছাতে পারছে না। অসংখ্য মানুষের নিখোঁজ হওয়ার খবর আসছে, কিন্তু জরুরি কর্মীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে ব্যর্থ হচ্ছেন। এতে আহতদের চিকিৎসা ও উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।
হাসপাতালগুলোতে আহতদের ভিড় এতটাই বেড়েছে যে চিকিৎসকরা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। সিভিল ডিফেন্সের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের সীমিত সক্ষমতা নিয়ে এই ধরনের ভয়াবহ হামলার মোকাবিলা করা সম্ভব হচ্ছে না। তারা সতর্ক করে জানিয়েছে, গাজার কোনো স্থানই এখন নিরাপদ নয়। উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত সবখানেই বেসামরিক মানুষের বাড়িঘর, আশ্রয়কেন্দ্র এমনকি ত্রাণ শিবিরগুলোতেও বোমা হামলা চলছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অপুষ্টি এবং অনাহারে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮৯ জনে, যাদের মধ্যে ১১৫ জনই শিশু। দুর্ভিক্ষের শিকার হওয়া এলাকাগুলোতেও অবিরাম বোমা হামলা চলছে, যা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলছে। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, চারপাশে কেবল অবিরাম বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। একই সময়ে উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের একাধিক ভবনও ধ্বংস করা হয়েছে।
সোমবারের হামলায় গাজা শহরের আল-জালাআ সড়কের একটি অ্যাপার্টমেন্টে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে একজন শিশুও রয়েছে। চিকিৎসকদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ত্রাণ নেওয়ার অপেক্ষায় থাকা অবস্থায় ইসরায়েলি হামলায় ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা যুদ্ধ পরিস্থিতিতে মানবিক সহায়তার নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে। খাদ্যের অভাবে প্রতিদিনই মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে, যা গাজার মানুষের ওপর যুদ্ধের ভয়াবহ প্রভাবকে তুলে ধরছে।
এই ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকট এবং ইসরায়েলের অব্যাহত হামলার মুখে ফিলিস্তিনের বেসামরিক মানুষ চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলের নীরবতা এবং কার্যকর পদক্ষেপের অভাব এই সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।