জাতীয়

জুলাই ঘোষণাপত্র থেকে নারীকে সচেতনভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে – সিপিডি

  প্রতিনিধি ৯ অগাস্ট ২০২৫ , ১০:০৬ এএম প্রিন্ট সংস্করণ

জুলাই ঘোষণাপত্র থেকে নারীকে সচেতনভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে

শনিবার, ৯ আগস্ট, ২০২৫। বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এক চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, সম্প্রতি ঘোষিত ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ থেকে নারীকে ‘সচেতনভাবে’ বাদ দেওয়া হয়েছে। তার মতে, বৈষম্যহীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতে হলে এই ধরনের পদক্ষেপ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আজ শনিবার প্রথম আলো আয়োজিত ‘সংসদে নারী আসন ও নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এই মন্তব্য করেন।

গোলটেবিল বৈঠকে গোলাম মোয়াজ্জেম জোর দিয়ে বলেন, ‘আমি পুরো ঘোষণাপত্রটি পড়েছি এবং এর প্রতিটি শব্দ বোঝার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোথাও নারীর কোনো উল্লেখ পাইনি।’ তিনি আরও বলেন, যদি ঘোষণাপত্রে সমাজের সব গোষ্ঠীকেই বাদ দেওয়া হতো, তাহলে ধরে নেওয়া যেত যে কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকেই টার্গেট করা হয়নি। কিন্তু যখন কয়েকটি গোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করে কেবল নারীদের বাদ দেওয়া হয়, তখন বুঝতে হবে যে এটি একটি সচেতন পদক্ষেপ।

কেন এই বৈষম্য?

গোলাম মোয়াজ্জেম প্রশ্ন তোলেন, ঘোষণাপত্রটির সঙ্গে যুক্ত তরুণ প্রতিনিধিরা কেন এই বিষয়টি দেখেও নীরব ছিলেন। তিনি মনে করেন, এই ধরনের একটি বৈষম্যমূলক ঘোষণাপত্রের বিষয়ে সবারই একটি সুস্পষ্ট অবস্থান নেওয়া উচিত। তার মতে, বাংলাদেশ এখন এক ধরনের ইসলামিকরণের দিকে যাচ্ছে এবং রাজনৈতিক দলগুলো সচেতনভাবে এই পথে হাঁটছে। এর ফলে আগামী সংসদগুলোতে নারী নেতৃত্ব আরও কমে যাবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, ‘আগামী সংসদে নারী নেতৃত্ব এখন যা দেখেছেন, তার থেকে অনেক কম হবে।’

সমাধানের পথে অন্তরায়

মোয়াজ্জেম বলেন, নারী ক্ষমতায়নের মূল জায়গাটি রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতর থেকেই আসতে হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, রাজনৈতিক দল সংস্কারের বিষয়ে কোনো কমিশন গঠন করা হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোর এই ঘাটতির কারণেই বর্তমান পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সংসদগুলোতে নারীদের আলংকারিক ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কমিটিগুলোতে নারীরা থাকলেও তারা কোরাম পূরণের জন্যই যান, সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন না। তাদের বক্তব্যও গুরুত্ব পায় না। তাই কেবল সংসদে নারীর উপস্থিতিই সমাধান নয়, এটি কেবল প্রথম ধাপ হতে পারে।

সরাসরি নির্বাচন ও পর্যবেক্ষণের গুরুত্ব

নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য সরাসরি নির্বাচনের দাবি তোলেন গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, সংরক্ষিত আসন থেকে আসা জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে ‘জনপ্রতিনিধিত্বের বোধ’ কম থাকে, কারণ তারা সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন না। তাই সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নারীদের সংসদে আসার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। তিনি লিঙ্গবৈষম্য ও নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোকে লিঙ্গ-সম্পর্কিত সংসদীয় পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা চালু করার অনুরোধ জানান। এতে রাজনৈতিক দলগুলোর নারী নেতৃত্ব সংস্কারের দিকগুলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা যাবে। এই গোলটেবিল বৈঠকে বিভিন্ন নারী অধিকার ও রাজনৈতিক সংস্কার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন, যারা নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন।