প্রতিনিধি ২৬ অগাস্ট ২০২৫ , ১২:২৭ পিএম প্রিন্ট সংস্করণ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার আজ থেকে শুরু হয়েছে। প্রার্থীরা আগামী ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাঁদের নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারবেন। ভোট গ্রহণ হবে ৯ সেপ্টেম্বর সকাল আটটায়। নির্বাচনের আচরণবিধি মেনে প্রার্থীরা সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত প্রচারের সুযোগ পাবেন, তবে ছাত্রীদের হলগুলোতে এই সময়সীমা রাত ১০টা পর্যন্ত।
বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা মূলত চারটি প্রধান কৌশলের মাধ্যমে ভোটারদের কাছে নিজেদের বার্তা পৌঁছে দিতে চান। এর মধ্যে রয়েছে অনলাইন বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, পোস্টার ও লিফলেট, ব্যানার এবং সরাসরি হল ও একাডেমিক ভবনগুলোতে প্রচারণা।
বিভিন্ন প্যানেলের প্রস্তুতি
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ–সমর্থিত প্যানেল বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ, স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেল এবং প্রতিরোধ পর্ষদ প্যানেল—সবাই আজ থেকে তাদের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করেছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের এজিএস প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদ এবং বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের জিএস প্রার্থী আবু বাকের মজুমদার জানান, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের পর তারা প্রচার শুরু করবেন। স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা জানান, তারা উদ্ভাবনী কোনো পদ্ধতিতে প্রচার চালাবেন। অন্যদিকে, প্রতিরোধ পর্ষদ প্যানেলের এজিএস প্রার্থী জাবির আহমেদ জুবেল জানান, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে তাদের প্রচার শুরু হবে।
নির্বাচনী আচরণবিধি: কী করা যাবে, কী করা যাবে না
নির্বাচনের জন্য কঠোর আচরণবিধি প্রণয়ন করা হয়েছে। এই বিধি অনুযায়ী, প্রার্থীরা সাদাকালো পোস্টার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিল ছাপাতে পারবেন, যেখানে শুধু তাদের নিজস্ব সাদাকালো ছবি থাকবে। তবে, কোনো দেয়াল, গাছপালা, বিদ্যুৎ খুঁটি বা অন্য কোনো স্থাপনায় পোস্টার লাগানো যাবে না। ফটক, তোরণ, ক্যাম্প বা আলোকসজ্জা নির্মাণ করা যাবে না, তবে অস্থায়ী প্যান্ডেল বা মঞ্চ স্থাপন করা যাবে।
প্রচারণায় কোনো ধরনের আক্রমণাত্মক বক্তব্য, গুজব ছড়ানো বা উসকানিমূলক কথা বলা যাবে না। প্রার্থীরা ভোটারদের কোনো ধরনের উপহার বা খাবার দিতে পারবেন না। সভা-সমাবেশ বা শোভাযাত্রার জন্য অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি নিতে হবে। অনলাইন প্রচারণা আইনসিদ্ধ এবং ইতিবাচক পদ্ধতিতে হতে হবে। কোনো ব্যক্তি যদি আচরণবিধি লঙ্ঘন করেন, তবে তাকে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা জরিমানা, প্রার্থিতা বাতিল বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে।
প্রার্থিতা ও ভোটার তালিকা
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে ২১ জন প্রার্থী তাঁদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। আপিল করা ৩৪ জন প্রার্থীর সবার মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে জুলিয়াস সিজার তালুকদার ও বায়েজিদ বোস্তামী নামের দুই শিক্ষার্থীকে ভোটার ও প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিষয়টি সিন্ডিকেটে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের আবেদনের কারণে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনলাইনে উন্মুক্ত রাখা বন্ধ করা হয়েছে। তবে, সংশ্লিষ্ট হল ও দপ্তরগুলোতে এই তালিকা উন্মুক্ত থাকবে। যেসব ভোটার তাঁদের ছবি দেখাতে চান না, তাঁদের বুধবারের মধ্যে আবেদন করতে বলা হয়েছে।
নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে একটি বিশেষ বৈঠক হয়েছে। সভায় উপাচার্য নিয়াজ আহমদ খানসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠকে সুষ্ঠু ভোট গ্রহণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে বিভিন্ন কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়েছে।