প্রতিনিধি ২৩ অগাস্ট ২০২৫ , ১২:২৪ পিএম প্রিন্ট সংস্করণ
অতিরিক্ত বর্ষণ আর টানা বৃষ্টির কারণে দেশের কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর ফলে কাঁচা মরিচের উৎপাদন কমে যাওয়ায় দেশের বাজারে দেখা দিয়েছে তীব্র সংকট। আর এই সংকট মোকাবিলায় ভারত থেকে মরিচ আমদানি হলেও, সেই মরিচ সাধারণ ক্রেতার পকেটে আগুন ধরাচ্ছে। বেনাপোল স্থল বন্দর দিয়ে গত এক মাসে এক হাজার ৫২১ মেট্রিক টন মরিচ আমদানি হয়েছে, কিন্তু বাজারে এর কোনো ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। আমদানি করা মরিচ বন্দরে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও, খুচরা বাজারে তা ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ ক্রেতারা।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) বেনাপোল বন্দর দিয়ে ১১টি ট্রাকে মোট ১৬৫ মেট্রিক টন কাঁচা মরিচ আমদানি হয়েছে। আমদানিকারকরা বলছেন, চাহিদা মেটাতে তারা নিয়মিতভাবে মরিচ আনছেন, কিন্তু তারপরও দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। গত ১৫ দিন আগেও যে কাঁচা মরিচ ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে পাওয়া যেতো, এখন তা কিনতে ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে প্রায় তিনশ টাকা।
আমদানিকারকদের নথিপত্র অনুযায়ী, ভারত থেকে প্রতি কেজি মরিচ আমদানি করতে শুল্ক ও অন্যান্য খরচসহ সর্বোচ্চ ৮০ থেকে ৮৫ টাকা খরচ হয়। তাহলে এই মরিচ খুচরা বাজারে কেন এতো বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে?
বেনাপোলের আমদানিকারক হাফিজ আহমেদ জানান, বেশিরভাগ মরিচ ভারতের মহারাষ্ট্র থেকে আমদানি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা খুব সামান্য লাভে মরিচ বিক্রি করি। কিন্তু হাতবদল হতে হতে খুচরা বাজারে দাম কয়েক গুণ বেড়ে যায়।’ অর্থাৎ, আমদানিকারকদের কাছ থেকে খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত পৌঁছাতে মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে দাম বাড়ছে।
বেনাপোল আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ আমদানিতে সরকারকে ৩৬ টাকা শুল্ক দিতে হয়। তার মতে, ‘সরকার যদি শুল্ক কমায়, তাহলে আমদানি খরচ কমবে এবং বাজারেও মরিচের দাম কমবে। এতে ক্রেতারাও উপকৃত হবেন।’
অন্যদিকে, খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, তাদের কাছে পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় দাম বেশি। বেনাপোল বাজারের কাঁচা মরিচ বিক্রেতা আনন্দ বাণিজ্য ভান্ডারের মালিক আনন্দ বলেন, ‘আমদানি করা মরিচগুলো সাধারণত বিভাগীয় ও জেলা শহরে চলে যায়। তাই স্থানীয় বাজারে দাম বেশি। যদি আমদানি আরও বাড়ানো হয়, তবে দাম কমবে।’
ক্রেতা আবির ইসলাম বলেন, ‘কাঁচা মরিচের দাম অতিরিক্ত। বাজারে নিয়মিত তদারকি না থাকার কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’ তার মতে, সরকারি নজরদারি বাড়লে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমবে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।
বেনাপোল স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপসহকারী কর্মকর্তা শ্যামল কুমার নাথ বলেন, ‘দেশে চাহিদা বাড়ায় ভারত থেকে কাঁচা মরিচের আমদানি বেড়েছে। আমদানিকারকদের দ্রুত পণ্য ছাড়ের সুবিধার জন্য আমরা বন্দরে ট্রাক প্রবেশের পর দ্রুত নমুনা পরীক্ষা করে ছাড়পত্র দিচ্ছি।’
সব মিলিয়ে, আমদানি স্বাভাবিক থাকলেও উচ্চ শুল্ক এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে কাঁচা মরিচের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।