রাজনীতি

দীর্ঘ ৩৩ বছর পর জাকসু নির্বাচন: ছাত্রী হলে প্রার্থী সংকট, ছাত্র হলে উৎসবের আমেজ

  প্রতিনিধি ২২ অগাস্ট ২০২৫ , ৮:৫৬ এএম প্রিন্ট সংস্করণ

দীর্ঘ ৩৩ বছর পর জাকসু নির্বাচন: ছাত্রী হলে প্রার্থী সংকট, ছাত্র হলে উৎসবের আমেজ

দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশি সময় পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) এবং হল সংসদ নির্বাচনের ডামাডোল শুরু হয়েছে। আগামী ১১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এই বহু প্রতীক্ষিত নির্বাচন। গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। জাকসু এবং হল সংসদ মিলিয়ে মোট ৫৯৮টি পদের বিপরীতে ৯৩৫ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। কিন্তু এই উৎসবের আবহের মধ্যেও একটি বড় বৈষম্য চোখে পড়েছে: ছাত্র হলগুলোতে যখন প্রার্থীদের মধ্যে তুমুল প্রতিযোগিতা, তখন ছাত্রী হলগুলোতে চলছে প্রার্থী সংকট।

প্রার্থী সংখ্যার বৈষম্য

জাকসুর ২৫টি পদের জন্য ২৭৩ জন এবং ২১টি আবাসিক হলে মোট ৩১৫টি পদের জন্য ৪৬৭ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। কিন্তু এই মোট প্রার্থীর অর্ধেকেরও বেশি এসেছেন ছাত্র হলগুলো থেকে। অন্যদিকে, ছাত্রী হলগুলোতে প্রার্থী সংখ্যা পদের তুলনায় অনেক কম। এমনকি কয়েকটি ছাত্রী হলে পদের সমান সংখ্যক প্রার্থীও পাওয়া যায়নি।

নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে মাত্র ৬ জন, ১৩ নম্বর ছাত্রী হলে ৬ জন, সুফিয়া কামাল হলে ১০ জন, বেগম খালেদা জিয়া হলে ১১ জন এবং প্রীতিলতা হলে ১৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এই সংখ্যাগুলো প্রতিটি হলের জন্য নির্ধারিত ১৫টি পদের চেয়ে অনেক কম। ফলে এই হলগুলোতে অনেক পদেই কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই প্রার্থীরা নির্বাচিত হতে পারেন।

ছাত্রী হলে প্রার্থী কম হওয়ার কারণ

ছাত্রী হলে প্রার্থী কম হওয়ার বেশ কয়েকটি কারণ সামনে এসেছে। এই প্রতিবেদক অন্তত ১০ জন ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, অনেকেই নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী হলেও পারিবারিক বাধার কারণে পিছিয়ে এসেছেন। এছাড়া, সম্প্রতি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যেসব ছাত্রী সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাদের অনেকেই পড়াশোনা শেষ হওয়ায় ভোটার হতে পারেননি, ফলে নির্বাচনেও অংশ নিতে পারছেন না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ নম্বর ছাত্রী হলের এক শিক্ষার্থী বহ্নি আহমেদ বলেন, “আমার হলে ১৫টি পদে মাত্র ১৭ জন প্রার্থী হয়েছেন। মনোনয়ন প্রত্যাহারের পর প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা খুবই কম।”

নির্বাচন কমিশনের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, তারা ছাত্রী হলগুলোতে প্রার্থীর সংখ্যা বাড়াতে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় আরও একদিন বাড়ানোর কথা ভাবছেন।

ছাত্র হলগুলোতে সরব উপস্থিতি

ছাত্রী হলগুলোর এই চিত্রের সম্পূর্ণ বিপরীত দেখা গেছে ছাত্র হলগুলোতে। সেখানে প্রার্থীর সংখ্যা পদের তুলনায় অনেক বেশি। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলে ১৫টি পদের বিপরীতে ৬০ জন প্রার্থী এবং শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হলে ৪৯ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এছাড়া, অন্যান্য ছাত্র হলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের তৎপরতা

নির্বাচন উপলক্ষে ছাত্র সংগঠনগুলোও তৎপর হয়ে উঠেছে। ছাত্রশিবির ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ ব্যানারে তাদের প্যানেল ঘোষণা করেছে। এতে ভিপি পদে আরিফুল্লাহ আদিব ও জিএস পদে মাজহারুল ইসলাম মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুহিবুর রহমান জানিয়েছেন, তাদের প্যানেলে জুলাই আন্দোলনের সম্মুখ সারির যোদ্ধা, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী এবং ৬ জন নারী শিক্ষার্থী আছেন।

অন্যদিকে, বামপন্থী সংগঠনগুলো ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’ নামে প্যানেল দিতে পারে। তবে ছাত্রদলের প্রার্থী এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তারা সম্ভাব্য প্রার্থীদের দিয়ে বিভিন্ন পদে একাধিক মনোনয়নপত্র জমা দিলেও, প্রার্থী চূড়ান্ত করতে ১৪ ঘণ্টা ধরে বৈঠক করেছে। শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন বাবর জানিয়েছেন, তারা রোববার প্যানেল ঘোষণা করবেন।

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর জাকসু নির্বাচন জাবিতে নতুন করে রাজনৈতিক উৎসবের আমেজ এনেছে। ২৯ আগস্ট চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর নির্বাচনের আসল চিত্র আরও পরিষ্কার হবে।