প্রতিনিধি ১১ অগাস্ট ২০২৫ , ৬:৪৪ পিএম প্রিন্ট সংস্করণ
সোমবার (১০ আগস্ট) রাজধানীর লেকশোর হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ৩৬৫ দিন’ শীর্ষক সংলাপে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ সময় বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকাত আজিজ রাসেল দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার পরিবর্তে বন্ধ করে দেওয়ার পক্ষে জোরালো মন্তব্য করেছেন। তার মতে, জনগণের করের টাকা দিয়ে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা অর্থহীন। বরং সেই অর্থ ব্যাংকগুলোর আমানতকারীদের ফিরিয়ে দেওয়াই যুক্তিযুক্ত।
শওকাত আজিজ বলেন, “মরে যাওয়া ব্যাংকগুলোকে বাঁচাতে কেন টাকা ঢালা হচ্ছে? চোরদের পিছনে টাকা দিচ্ছেন কেন? ওই টাকা বরং ব্যাংকগুলোর আমানতকারীদের ফিরিয়ে দিন।” তিনি আরও যোগ করেন, “যত পরিবর্তনই আনুন না কেন, এসব ব্যাংকের মালিকানা একই থাকবে- তারা আবারও ফিরে আসবে। এই ব্যাংকগুলো বন্ধ করে দেওয়া উচিত।” তিনি পরামর্শ দেন যে কর্মসংস্থান ধরে রাখার জন্য ভালো ব্যাংকগুলোকে এই দুর্বল ব্যাংকগুলোর কিছু শাখা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।
সংলাপে দেশের বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞরা তাদের মতামত দেন। এর মধ্যে সিপিডির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য রাশেদা কে চৌধূরী শিক্ষা খাতকে পর্যাপ্ত গুরুত্ব না দেওয়ার সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “শিক্ষা খাত গুরুত্ব পায়নি। নিম্নবিত্ত বা দরিদ্রদের প্রয়োজন সংস্কারের মধ্যে হারিয়ে গেছে।” তিনি আরও বলেন, “বৈষম্য দূর করতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে গুরুত্ব দিতে হবে।” রাশেদা কে চৌধূরী বৃত্তি ব্যবস্থায় কোটা প্রথার পরিবর্তে মেধার ভিত্তিতে সুযোগ দেওয়ার ওপর জোর দেন। তার মতে, নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় সমাজের সব স্তরের মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদুজ্জামান খান বাবু ব্যাংক একীভূতকরণের সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “পাঁচটি ব্যাংক মার্জ করবেন- এ কথা বলছেন। যখন করবেন তখন বলতেন। এখন ওইসব ব্যাংকে এলসি খোলা যাচ্ছে না।” তার মতে, এই অনিশ্চয়তার কারণে ওই ব্যাংকগুলোর তৈরি পোশাক খাতের গ্রাহকরা বড় ধরনের সমস্যার মুখে পড়ছেন।
সংলাপে অংশগ্রহণকারী ব্যাংকার, ব্যবসায়ী এবং সাবেক আমলারা সবাই একমত হন যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংক একীভূতকরণ বা সংযুক্তি সংক্রান্ত নীতিমালা আরও স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। তাদের মতে, অস্পষ্ট নীতিমালার কারণে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে এবং বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা সমস্যায় পড়ছেন। সামগ্রিকভাবে, এই সংলাপ থেকে এটি স্পষ্ট যে দেশের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন খাতে সুনির্দিষ্ট এবং স্বচ্ছ নীতিমালার প্রয়োজন।