প্রতিনিধি ১৪ অগাস্ট ২০২৫ , ৯:২৯ এএম প্রিন্ট সংস্করণ
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে শেষ হচ্ছে ইউরোপিয়ান ফুটবলপ্রেমীদের অপেক্ষার প্রহর। গ্রীষ্মের বিরতি শেষে ফের মাঠে ফিরছে ইউরোপের শীর্ষ ফুটবল লিগগুলো। বাংলাদেশ সময় আগামী শুক্রবার (১৫ আগস্ট) রাত থেকে একই দিনে শুরু হচ্ছে ২০২৫-২৬ মৌসুমের ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, স্প্যানিশ লা লিগা ও ফরাসি লিগ আঁ। তবে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ আর উত্তেজনা থাকছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে, যার জনপ্রিয়তা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিশ্বজুড়ে তুলনাহীন। নতুন মৌসুম শুরুর আগে তাই পুরোনো স্মৃতিগুলো মনে পড়ছে, নতুন করে রোমাঞ্চ অনুভব করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমী।
রোমাঞ্চে ভরপুর এক মৌসুমের হাতছানি
অনেকের মতেই, এবারের মৌসুমটি হতে পারে প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। গত মৌসুমে লিভারপুল অনেকটা একতরফাভাবে শিরোপা জিতে নিলেও, এবার লড়াইটা হতে যাচ্ছে চার দলের মধ্যে। বাজির অঙ্ক বলছে, লিভারপুল, আর্সেনাল, ম্যানচেস্টার সিটি ও চেলসি—সবাই আছে শিরোপার দৌড়ে। লিভারপুল দলে ভিড়িয়েছে তরুণ তারকা ফ্লোরিয়ান ভির্টৎসকে, যাকে অনেকে বলছেন বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে সৃজনশীল খেলোয়াড়। ম্যানচেস্টার সিটি তাদের কিছু পুরোনো তারকাকে ছেড়ে তরুণদের ওপর আস্থা রেখেছে। আর্সেনাল অবশেষে তাদের কাঙ্ক্ষিত স্ট্রাইকার ভিক্টর ইয়োকেরেসকে পেয়েছে, আর চেলসি প্রাক-মৌসুম প্রস্তুতি ম্যাচে দেখিয়েছে যে তারাও সেরা দলগুলোর সঙ্গে লড়াই করতে প্রস্তুত। এই চার দলের মধ্যকার ১২টি ম্যাচেই ফুটবলপ্রেমীদের চোখ থাকবে সবচেয়ে বেশি।
স্ট্রাইকারদের মেলা ও গোলের বন্যা
এবারের মৌসুমে যেন স্ট্রাইকারদের মেলা বসেছে প্রিমিয়ার লিগে। ক্লাবগুলো ২০০ কোটি ইউরোর বেশি খরচ করে দল সাজিয়েছে, যার একটা বড় অংশ গেছে আক্রমণভাগের খেলোয়াড়দের পেছনে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড লাইপজিগ থেকে ৭ কোটি ৬৫ লাখ ইউরো দিয়ে নিয়ে এসেছে বেনিয়ামিন সেসকোকে। আর্সেনাল স্পোর্তিং লিসবন থেকে ভিক্টর ইয়োকেরেসকে দলে এনেছে ৭ কোটি ৩৫ লাখ ইউরো খরচ করে। অন্যদিকে লিভারপুলের নতুন নাম্বার নাইন হতে পারেন আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে আসা হুগো একিতিকে। এর সঙ্গে আলেকজান্ডার ইসাক, আর্লিং হলান্ড, কোল পালমার ও মোহাম্মদ সালাহ-এর মতো তারকা খেলোয়াড়রা তো আছেনই। স্বাভাবিকভাবেই, এবার লিগে গোলের বন্যা বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। গত মৌসুমে প্রতি ম্যাচে গোলের গড় যেখানে ছিল ২.৯৩, নতুন মৌসুমে তা অনেক বেড়ে যেতে পারে।
পাল্টা আক্রমণের নতুন গতি
পাল্টা আক্রমণের খেলায় প্রিমিয়ার লিগ বরাবরই এগিয়ে। গত কয়েক মৌসুমে এই খেলার ধরন আরও নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। ২০১৮-১৯ মৌসুমে যেখানে প্রতি-আক্রমণ রেকর্ড হয়েছিল ৩৮৯টি, গত মৌসুমে তা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ৭৭৫-এ দাঁড়িয়েছে। চ্যাম্পিয়ন লিভারপুল এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে। সালাহ-কে সামনে রেখে তারা গত মৌসুমে ১৪টি গোল করেছে প্রতি-আক্রমণ থেকে। পেপ গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটিও পিছিয়ে থাকতে চায় না। নতুন মৌসুমে গার্দিওলা হয়তো পজিশন-নির্ভর ফুটবল থেকে সরে এসে তাঁর দলকে পাল্টা আক্রমণের ছন্দে সাজাতে পারেন। ম্যান সিটির এই পরিবর্তনের দিকে সবার নজর থাকবে।
কম চোট এবং বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা
গত মৌসুমে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোতে চোটের কারণে লিভারপুলের শিরোপা জেতা কিছুটা সহজ হয়েছিল। কিন্তু এবার চিত্র ভিন্ন। গ্রীষ্মে বড় কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট না থাকায় খেলোয়াড়রা যথেষ্ট বিশ্রাম পেয়েছেন। আর্সেনাল, সিটি, ইউনাইটেড, টটেনহাম, চেলসি—সব দলই তাদের সেরা একাদশকে বেশি ম্যাচে খেলাতে পারবে। ফলে গতবারের মতো কোনো দল সুবিধা পাবে না, যা মৌসুমের প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে আরও বাড়িয়ে দেবে। সব মিলিয়ে, এবারের প্রিমিয়ার লিগ থেকে চোখ ফেরানো কঠিন হতে চলেছে।
এখন একটাই প্রশ্ন, শুক্রবার আসতে আর কতক্ষণ!