আন্তর্জাতিক

নেতানিয়াহুর ‘গ্রেটার ইসরাইল’ মন্তব্য: আরব বিশ্বে তীব্র নিন্দা ও নতুন উত্তেজনা

  প্রতিনিধি ১৪ অগাস্ট ২০২৫ , ১:২৬ পিএম প্রিন্ট সংস্করণ

নেতানিয়াহুর 'গ্রেটার ইসরাইল' মন্তব্য: আরব বিশ্বে তীব্র নিন্দা ও নতুন উত্তেজনা

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাম্প্রতিক এক মন্তব্য মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি করেছে। ‘গ্রেটার ইসরাইল’ সম্পর্কিত তার দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি ‘সংযোগ’ বোধ করার মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আরব লীগ। একইসাথে তার এই মন্তব্যকে মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রগুলোর সার্বভৌমত্বের জন্য সরাসরি হুমকি হিসেবেও অভিহিত করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম চ্যানেল২৪-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেন, তিনি ‘গ্রেটার ইসরাইল’ দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি ‘সংযোগ’ বোধ করেন। তিনি নিজেকে ‘একটি ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক মিশনে’ আছেন বলেও মনে করেন। তার মতে, এই মিশন ‘এখানে আসার স্বপ্ন দেখে এমন ইহুদিদের প্রজন্ম এবং আমাদের পরে যারা আসবে তাদের প্রজন্মের জন্য’। তার এই মন্তব্যটি তাৎক্ষণিকভাবে আরব দেশগুলোর মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।

আনাদোলু এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী, ইসরাইলের রাজনীতিতে ‘গ্রেটার ইসরাইল’ শব্দটি একটি বিশেষ ভূখণ্ডের সম্প্রসারণকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে রয়েছে পশ্চিম তীর, গাজা এবং সিরিয়ার গোলান হাইটস। এর থেকেও বড় পরিসরে, এই মিশনে মিশরের সিনাই উপদ্বীপ এবং জর্ডানের কিছু অংশকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। নেতানিয়াহুর এই ধরনের মন্তব্য আরব দেশগুলোর নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের জন্য এক গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

 

মিশর ও জর্ডানের ক্ষোভ: শান্তি প্রক্রিয়া ঝুঁকির মুখে

 

নেতানিয়াহুর মন্তব্যের পর মিশর তার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে স্পষ্টীকরণ চেয়েছে। এক বিবৃতিতে মিশরীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই মন্তব্যগুলো ‘আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক দলগুলোর আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক, যারা শান্তিকে মূল্য দেয় এবং এই অঞ্চলের সব জনগণের জন্য নিরাপত্তা ও শান্তি অর্জন করতে চায়।’ মিশরের এই প্রতিক্রিয়া থেকে বোঝা যায়, তারা নেতানিয়াহুর এই ধরনের সম্প্রসারণবাদী চিন্তাভাবনাকে শান্তির জন্য বড় বাধা হিসেবে দেখছে।

অন্যদিকে, জর্ডান এই মন্তব্যকে ‘একটি বিপজ্জনক এবং উসকানিমূলক উত্তেজনা বৃদ্ধি’ হিসেবে অভিহিত করেছে। জর্ডানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নেতানিয়াহুর মন্তব্যকে সরাসরি ‘রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি, আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন’ বলে নিন্দা জানিয়েছে। জর্ডান বহু বছর ধরে ইসরাইলের সঙ্গে শান্তি বজায় রেখে চলেছে, কিন্তু এই ধরনের মন্তব্য তাদের পারস্পরিক সম্পর্ককে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে।

 

আরব লীগের কড়া হুঁশিয়ারি: আঞ্চলিক শান্তির জন্য হুমকি

 

আরব লীগ নেতানিয়াহুর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে। তারা মনে করে, এই ধরনের সম্প্রসারণবাদী চিন্তা মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করতে পারে। নেতানিয়াহুর মন্তব্য শুধু রাজনৈতিক নয়, বরং এটি একটি ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক প্রেক্ষাপট থেকে এসেছে, যা এই বিতর্কের গভীরতা বাড়িয়ে দিয়েছে। এই মন্তব্যের ফলে ইসরাইল ও তার প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্কের আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আন্তর্জাতিক মহলে এই মন্তব্য নিয়ে এখনও নীরবতা থাকলেও, আরব দেশগুলোর কঠোর প্রতিক্রিয়া স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, নেতানিয়াহুর ‘গ্রেটার ইসরাইল’ দৃষ্টিভঙ্গি মধ্যপ্রাচ্যের জন্য একটি গুরুতর হুমকি। এই ঘটনার পর আঞ্চলিক শান্তি প্রক্রিয়া কী নতুন মোড় নেবে, তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে।