রাজাগাঁও নামে নদীর একটি তীরবর্তি গ্রাম। রাজাগাঁও নাম হলে কি হবে, সেখানে কোনো রাজা-বাদশা নেই। এমনকি এখানকার মানুষেরা ধনীও নয়। তারা অনেক গরিব। দিন আনে দিন খায়। কারো কারো আবার এমন অবস্থা যে, ২-৩ দিন ধরে না খেয়ে থাকতে হয়। গ্রামের অর্থনীতি নির্ভর করে মূলত কৃষি ব্যাবস্থার উপর। নদীর মাছও তাদের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।
যদিও এই গ্রামের লোকেরা গরিব, তবুও তারা সুখি জীবন-যাপন করে। কেউ না খেয়ে থাকলে, তাকে তাদের সাধ্যমত সাহায্য করে। তবুও তাদের দুর্দশার জন্য বেশী কিছু সাহায্য করতে পারেনা। কিন্তু, তবুও তারা সুখি। কারণ, তাদেরকে রাজার হুকুম মানতে হয় না। কোনো খাজনা দিতে হয় না। এই গ্রামের কেউ প্রধান নয়। তবে একটি বালক আছে, যাকে ওই গ্রামের সবাই এককথায় বিশ্বাস করে।
রাজু। রাজাগাঁও গ্রামের একটি এতিম বালক। খেয়ে না খেয়ে ঘুরে বেড়ায় বন-বাদাড়ে। গ্রামের সবাই তাকে ভালোবাসে। সে সবার বিপদেই ঝাঁপিয়ে পড়ে। কারো সাথে তার কোনো ঝগড়া-বিবাদ নেই। এমনকি তাদের গ্রামের পাশে যে জঙ্গলটি আছে, সেখানকার প্রাণীদের সাথেও তার খুব ভাব। সবার সাথে সে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখে। তাই বনের প্রাণীরাও তাকে খুব ভালোবাসে।
তার বুদ্ধি, বিচার করার ক্ষমতাও অনেক। গ্রামে কোনো সমস্যা হলে সবাই তার কাছে আসে। কি করে এই সমস্যা দূর করা যায়, তার সঠিক সমাধান দেয় সে। আবার, গ্রামে কেউ অন্যায় করলে তার কাছে বিচার নিয়ে আসে সবাই। সে সঠিক বিচারই করে। কাউকে বিনা বিচারে শাস্তি পেতে দেয় না সে। তাই তাকে সবাই এককথায় বিশ্বাস করে।
একদিনের ঘটনা। রাজু প্রতিদিনের মতো আজকেও জঙ্গলে ঘুরতে বেরিয়েছে। নদীর কূলঘেঁষে জঙ্গল। এই জঙ্গলে থাকে না কোনো বাঘ। তবে হরিণ, মহিষসহ অন্যান্য প্রাণীগুলো থাকে এই জঙ্গলে। কিন্তু, ভয়ের কারণ হলো, এই জঙ্গলে বাঘ না থাকলেও, বনের রাজা সিংহ থাকে। তাই এই জঙ্গলে সে সতর্কতার সাথে প্রবেশ করে। সেখানে যতক্ষণ থাকে, ততক্ষণ সে সতর্কতার সাথে চোখ, কান খোলা রেখে অবস্থান করে।
রাজু কিছুক্ষণ জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে বেড়াল। তারপর নদীর কাছে গিয়ে মুখ হাত ধুয়ে নিল। এরপর সে গ্রামে ফিরবে। কিন্তু ফিরবে যখন, তখন দেখতে পেল নদীতে একটি পিঁপড়া ভেসে যাচ্ছে। সেই অসহায় পিঁপড়াকে দেখে তার মনে কষ্ট হলো। সে একটি লাঠি সংগ্রহ করল। তারপর সেই লাঠি নদীতে নিয়ে এলো। এরপর সে ওই লাঠির একপাশ ধরে অন্য পাশ নদীতে ফেলে দিল। পিঁপড়াটা কষ্ট করে ওই লাঠিটা আকড়ে ধরল।
রাজু লাঠিটাকে নিজের দিকে টেনে নিল। ডাঙ্গায় এসে পিঁপড়াটা যেন তার প্রাণ ফিরে পায়। পিঁপড়াটা তার প্রাণ রক্ষা করার জন্য রাজুকে তার ভাষায় ধন্যবাদ দিল। কিন্তু সে ভাষা তো রাজু বুঝে না। তাই সে পিঁপড়াটাকে ডাঙ্গায় ছেড়ে চলে আসল। কিন্তু পিঁপড়াটা তাকে মনে করে রেখেছে।
এরপরে কিছু দিন পর যখন, রাজু অনেক বড় বিপদে পড়ে, তখন এই পিঁপড়াটাই রাজুকে সেই বিপদ থেকে উদ্ধার করে।
তোমরা কি জানতে চাও, সেই রাজুর বিপদে পড়ার কাহিনীটা? কমেন্ট করে জানিয়ে দিও। আমি এর পরের পর্বে সেই কাহিনী নিয়ে আলোচনা করব।
আজকের কাহিনীটা পড়ার জন্য সকলকে ধন্যবাদ।