প্রতিনিধি ২৬ অগাস্ট ২০২৫ , ১২:৩৩ পিএম প্রিন্ট সংস্করণ
ওয়াশিংটন: যুক্তরাষ্ট্রের উড়োজাহাজ নির্মাণকারী সংস্থা বোয়িং এবং দক্ষিণ কোরিয়ার বিমান সংস্থা কোরিয়ান এয়ারের মধ্যে একটি বিশাল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রায় ৩ হাজার ৬০০ কোটি ডলার মূল্যের এই চুক্তির আওতায় কোরিয়ান এয়ার বোয়িংয়ের কাছ থেকে ১০৩টি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ কিনবে। সোমবার ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিউংয়ের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা পরেই এই ঐতিহাসিক চুক্তিটি সম্পন্ন হয়।
এই চুক্তি এমন এক সময়ে হলো, যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করতে বিভিন্ন বাণিজ্যিক অংশীদারদের ওপর চাপ প্রয়োগ করছেন। বোয়িং ও কোরিয়ান এয়ারের যৌথ বিবৃতি অনুসারে, এই চুক্তিতে বোয়িংয়ের জনপ্রিয় ৭৮৭, ৭৭৭, এবং ৭৩৭ মডেলের উড়োজাহাজ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
চুক্তির বিস্তারিত: কী কিনছে কোরিয়ান এয়ার?
এই যুগান্তকারী চুক্তির মাধ্যমে কোরিয়ান এয়ার তাদের উড়োজাহাজ বহরকে আরও আধুনিক করতে চাইছে। দক্ষিণ কোরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমান সংস্থা আসিয়ানা এয়ারলাইনসের সঙ্গে একীভূত হওয়ার পর এই চুক্তিটি তাদের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সাহায্য করবে বলে আশা করা হচ্ছে। কোরিয়ান এয়ারের প্রধান ওয়াল্টার চো জানিয়েছেন, তারা বোয়িংয়ের কাছ থেকে ৫০টি ৭৩৭–১০ যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ, ৪৫টি জেট বিমান এবং ৮টি ৭৭৭–৮ মডেলের কার্গো বিমান কিনবেন।
বোয়িংয়ের বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ বিভাগের প্রধান স্টেফানি পোপ এই চুক্তিকে একটি ‘যুগান্তকারী’ পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার কর্মসংস্থানকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করবে, যা বিশ্বজুড়ে বোয়িংয়ের ১ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি কর্মীর জন্য একটি ইতিবাচক খবর।
বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও মজবুত হচ্ছে
কোরিয়ান এয়ারের এই চুক্তিটি ওয়াশিংটনে দুই দেশের সরকারি প্রতিনিধি ও ব্যবসায়ী নেতাদের বৈঠকের সময় ঘোষণা করা হয়। এই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক এবং দক্ষিণ কোরিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী কিম জুং-কোয়ান উপস্থিত ছিলেন। সিউলের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এটি ছিল বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তির মধ্যে অন্যতম।
এই চুক্তির পাশাপাশি, দক্ষিণ কোরিয়ার গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হুন্ডাই মোটর গ্রুপও যুক্তরাষ্ট্রে তাদের বিনিয়োগ ২ হাজার ১০০ কোটি ডলার থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার ৬০০ কোটি ডলার করার ঘোষণা দিয়েছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রে একটি নতুন কারখানা স্থাপন করবে, যেখানে বছরে ৩০ হাজার রোবট তৈরি করা যাবে।
বোয়িংয়ের জন্য এটি একটি বড় সাফল্য। সম্প্রতি দুটি মারাত্মক দুর্ঘটনা এবং উড়ন্ত অবস্থায় উড়োজাহাজের অংশ ভেঙে যাওয়ার মতো কিছু সমস্যার মুখে পড়েছিল বোয়িং। ২০১৮ সালে একটি বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে ১৮৯ জন এবং কয়েক মাস পরে আরেকটি দুর্ঘটনায় ১৫৭ জন মারা যান। ২০২৪ সালেও একটি বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স উড়োজাহাজের জরুরি বহির্গমন প্যানেল খুলে গিয়েছিল। এমন সব দুর্ঘটনার পর এই ধরনের বড় চুক্তি বোয়িংয়ের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে সাহায্য করবে।
উল্লেখ্য, এর আগে জাপান ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির অংশ হিসেবে বোয়িংয়ের কাছ থেকে বিপুল সংখ্যক উড়োজাহাজ কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এসব চুক্তি বোয়িংকে তার ইউরোপীয় প্রতিদ্বন্দ্বী এয়ারবাসকে ছাড়িয়ে যেতে সাহায্য করেছে। নতুন এই কেনাকাটা নিয়ে চলতি বছর কোরিয়ান এয়ার বোয়িংকে মোট ১৫০টিরও বেশি উড়োজাহাজের অর্ডার দিয়েছে। এই চুক্তিটি উভয় দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের একটি নতুন অধ্যায় সূচিত করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।