প্রতিনিধি ২০ অগাস্ট ২০২৫ , ১:৫৬ পিএম প্রিন্ট সংস্করণ
সাম্প্রতিক সময়ে নয়াদিল্লি এবং মস্কোর মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক নতুন মোড় নিয়েছে। ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিনের এই বন্ধুত্ব এখন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আরও গভীর হচ্ছে। সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের মস্কো সফরের সময় রাশিয়ার পক্ষ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেওয়া হয়েছে। এই বার্তা অনুযায়ী, রাশিয়া দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে এবং বিদ্যমান ভারসাম্যহীনতা কমিয়ে আনতে আগ্রহী।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ভারতের জন্য জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা বর্তমানে দুই দেশের বাণিজ্যের একটি বড় অংশ। ইউক্রেন যুদ্ধের পর পশ্চিমা বিশ্বের কঠোর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ভারত ২০২২ সাল থেকে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের অন্যতম বৃহৎ ক্রেতা হিসেবে উঠে এসেছে। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার রুশ দূতাবাসের শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স রোমান বাবশকিন বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন যে, ভারত তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশীদার। তিনি স্বীকার করেছেন যে, ভারতের সামনে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে এবং সেইগুলো দূর করতে রাশিয়া সব ধরনের সাহায্য করতে প্রস্তুত। বাবশকিন জোর দিয়ে বলেছেন, ‘রুশ অপরিশোধিত তেলের কোনো বিকল্প নেই, কারণ এটি খুবই প্রতিযোগিতামূলক এবং ভারতের জন্য অত্যন্ত লাভজনক।’
একই সাথে রাশিয়া ভারতের সাথে তাদের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর বিষয়েও গুরুত্ব দিচ্ছে। রোমান বাবশকিন আশা প্রকাশ করেছেন যে, দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রতি বছর প্রায় ১০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, ভারতে তেল সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। উভয় দেশের মধ্যেকার বাণিজ্যিক বাধাগুলো দূর করার জন্য রাশিয়া কাজ করছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ভারতীয় পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন বাবশকিন। তিনি বলেন, ‘যদি ভারতীয় পণ্য মার্কিন বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হয়, তবে রাশিয়ার বাজার ভারতীয় রপ্তানির জন্য উন্মুক্ত।’ এই মন্তব্যটি ভারতের জন্য একটি বিকল্প বাজার হিসেবে রাশিয়ার গুরুত্ব তুলে ধরে।
রুশ দূতাবাস আরও জানিয়েছে, ভারত তাদের চতুর্থ বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার এবং ভবিষ্যতে ভারতে জ্বালানি সরবরাহ একই পর্যায়ে থাকবে। পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞাগুলোকে ‘দ্বিমুখী নীতি’ এবং ‘জাতীয় স্বার্থের প্রতি অসম্মান’ হিসেবে আখ্যায়িত করে রুশ দূতাবাস। এর পাশাপাশি, দুই দেশের মধ্যেকার পেমেন্ট বা অর্থ পরিশোধের পদ্ধতি আরও উন্নত করার ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে।
সব মিলিয়ে, রাশিয়ার এই বার্তা ভারত-রাশিয়া সম্পর্ককে আরও মজবুত করার একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত। জ্বালানি সরবরাহ, বাণিজ্য ঘাটতি কমানো এবং পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়ে দুই দেশ তাদের অর্থনৈতিক বন্ধনকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে আগ্রহী, যা বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন। এই পদক্ষেপগুলো শুধু বাণিজ্যিক সম্পর্ককেই দৃঢ় করবে না, বরং উভয় দেশের কৌশলগত অংশীদারিত্বকেও নতুন মাত্রা দেবে।