প্রতিনিধি ২৪ অগাস্ট ২০২৫ , ৯:৫২ এএম প্রিন্ট সংস্করণ
রাজধানীর ভূমি অফিসগুলোয় জমি সংক্রান্ত নানা সমস্যায় প্রতিদিন ভিড় করেন শত শত মানুষ। আধুনিক ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার প্রতিশ্রুতি থাকলেও বাস্তবে সেবাগ্রহীতাদের অভিজ্ঞতা ভিন্ন। সার্ভার ডাউন, জটিল প্রক্রিয়া এবং নথিপত্রের অভাবে দিনের পর দিন হয়রানির শিকার হচ্ছেন তারা। সম্প্রতি কাঁটাবন ও মিরপুর ভূমি অফিসে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় এই দুর্ভোগের চিত্র।
বৃহস্পতিবার সকালে কাঁটাবন ভূমি অফিসের সামনে দীর্ঘ লাইন। মিসকেস, নামজারি, খাজনা পরিশোধ—নানা কাজে আসা মানুষের চোখেমুখে হতাশা। উচ্চ আদালতের আইনজীবী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, সবারই অভিযোগ প্রায় একই। ডিজিটাল ব্যবস্থার নাম করে ভোগান্তি বেড়েছে।
আব্দুর রহমান নামে একজন জানান, একবার নামজারি করতে গিয়ে তাকে পদে পদে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। একেকবার একেক ধরনের কাগজপত্র চেয়ে হয়রানি করা হয়। বাবু মিয়া নামে আরেকজন খাজনা পরিশোধ করেও তার বাড়ি নিয়ে এক অজ্ঞাত ব্যক্তির মিথ্যা অভিযোগের শিকার। গত এক বছর ধরে তিনি বারবার শুনানির জন্য এসি ল্যান্ড অফিসে এলেও অভিযোগকারী ব্যক্তি আসেননি। তার মতে, এ ধরনের হয়রানিমূলক অভিযোগের কারণে আসল কাজ আটকে থাকে।
চকবাজারের বাসিন্দা মো. কুতুব উদ্দিন এসেছেন নামজারির সনদের জন্য। কিন্তু অফিস থেকে জানানো হয়,担当 কর্মকর্তা ছুটিতে আছেন। তিনি আরও বলেন, খাজনা পরিশোধের ক্ষেত্রে আইডি নম্বর নিয়ে এক নতুন জটিলতা তৈরি হয়েছে। পুরনো আইডি দিয়ে জমা না দিলে নতুন আইডি খোলা যাচ্ছে না, যা অনেক সাধারণ মানুষের জন্য এক বড় সমস্যা।
কাঁটাবন ভূমি অফিসে আসা শামছুজ্জামান নামের এক ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধের দুর্দশা আরও করুণ। ৩০ বছর আগে তার বাবা যে জমি কিনেছিলেন, সর্বশেষ সিটি জরিপে সেটি বিক্রেতার নামে লিপিবদ্ধ হয়েছে। ২৩ বছর ধরে তিনি এই ভুল সংশোধনের জন্য ঘুরছেন, কিন্তু কোনো সমাধান পাননি। কানুনগো-এর সঙ্গে বারবার আলোচনা এবং শুনানি হলেও জরিপের এই ভুল এখনো সংশোধন হয়নি।
অলিউর রহমান নামে আরেকজন ২০১৯ সাল থেকে তার ৯২ একর জমি উদ্ধারের জন্য ঘুরছেন। আদালতের রায় তার পক্ষে থাকলেও জমির দখল তিনি পাননি। সিএস জরিপে তার নাম থাকলেও আরএস এবং সিটি জরিপে দেখাচ্ছে অন্যের নাম।
শুধু কাঁটাবন নয়, মিরপুরের সেনপাড়া পর্বতা ভূমি অফিসের চিত্রও একইরকম। তাহমিনা আক্তার তার বাড়ি ভাগাভাগির পর নামজারির জন্য এসে দেখেন নতুন করে দাগ নম্বরের কাগজপত্র ওঠাতে হবে, কারণ পুরোনো দাগ নম্বরে ‘সমস্যা’ হয়েছে। শফিকুল ইসলাম শাওন নামের একজন অনলাইনে নামজারির আবেদন করে ১১ দিন পরেও কোনো নোটিফিকেশন পাননি। সশরীরে অফিসে এসে দেখেন সার্ভার ডাউন। তার অভিযোগ, মূলত হয়রানি করে টাকা আদায় করাই মূল উদ্দেশ্য।
টোলারবাগ থেকে আসা কামাল হোসেনও খাজনা জমা দিতে এসে সার্ভার সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে শেষে টাকা জমা দিয়ে চলে আসেন এই আশায় যে সার্ভার চালু হলে টাকা জমা হয়ে যাবে। একাধিক দালালও স্বীকার করেন, ডিজিটাল সেবার পর কাজ অনেক জটিল হয়েছে এবং সার্ভার সমস্যার কারণে কাজের গতি কমেছে।
ভূমির ডিজিটাল সেবা সহজ জীবনের প্রতিশ্রুতি দিলেও, সার্ভার সমস্যা, নথিপত্রের অভাব এবং দীর্ঘসূত্রতা সাধারণ মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে তুলেছে। সরকারের উচিত এই সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করা, যাতে ভূমি অফিসের সেবা সত্যিকার অর্থেই ডিজিটাল এবং জনবান্ধব হতে পারে।