আসসালামু আলাইকুম। হ্যালো পাঠক বন্ধুগন, আজকের পোস্টে মার্কেটিং অফিসারের কাজ কি | মার্কেটিং সম্পর্কে বিস্তারিত বলতে যাচ্ছি। এছাড়াও মার্কেটিং কেন প্রয়োজন? সেই বিষয় নিয়েও এ পোস্টে কথা বলবো।
মার্কেটিং সম্পর্কে জানুন বিস্তারিত
মার্কেটিং একটি ইংরেজি শব্দ। ব্যবসা- বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মার্কেটিং এর প্রচুর কাজ রয়েছে। আপনি যদি কমার্স বা ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী হন, এই মার্কেটিং সম্পর্কে আপনি অবশ্যই জানবেন। আবার, কোম্পানি চালাতে গেলে আপনাকে মার্কেটিং এর সাহায্য নিতেই হবে। মার্কেটিং শব্দের আভিধানিক অর্থ- প্রচার- প্রচারণা, বিপনন। যদিও বাস্তবিক অর্থে মার্কেটিং বেশ বড় এবং জটিল বিষয়। আর মার্কেটিং এর একটি অংশ হচ্ছে প্রচারণা।
সহজভাবে বলতে গেলে, মার্কেটিং এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পণ্য বাজারজাত করণ এবং মুনাফা অর্জন। মার্কিন লেখক এবং বিপণন বিশেষজ্ঞ ফিলিপ কোটলার মার্কেটিং এর ধারণাটিকে সংজ্ঞায়িত করেছেন এভাবে- বাজারে ক্রেতার নির্দিষ্ট চাহিদা পূরণের জন্য বিজ্ঞান, শিল্পকলা এবং আবিষ্কারের মাধ্যমে বাজারে বিভিন্ন পণ্য আনা এবং তা ক্রেতার কাছে বিক্রি করে মুনাফা অর্জনই হচ্ছে মার্কেটিং।
এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে মার্কেটিং এর প্রধান এবং অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে মুনাফা অর্জন। এমনকি পণ্যের উৎপাদন খরচের সাথে প্রচারণায় খরচকৃত অর্থ যোগ করে তারপর দাম নির্ধারণ করা হয়। একটু সহজ ভাষায় বলি।
ধরুন আপনি বাজারে একটা নতুন পণ্য আনবেন। কিন্তু সেটা লোকজনকে জানাতে হবে। কেননা শুধু দোকানে সাজিয়ে রাখলেই কেউ সেই পণ্যটা কিনবে না। বরং আপনাকে ক্রেতাকে জানাতে হবে এই পণ্যটি বাজারে চলে এসেছে। আর সেটা জানানোর অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে বিজ্ঞাপন। সময়ের সাথে সাথে বিজ্ঞাপনের ধরণে বদল এসেছে। এখন ইলেকট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়ার পাশাপাশি স্যোশাল মিডিয়াতেও বিজ্ঞাপন দেয়া যায়।
আর সেই পেইড এডভারটাইসমেন্টকে উৎসাহিত করার জন্য ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম আপনাকে নোটিফিকেশন পাঠায়। অনেক সময় পণ্য প্রচারের বিজ্ঞাপনদাতাদের জন্য এসব বড় বড় স্যোশাল মিডিয়াগুলো অফারও দেয় যেখানে আপনি কম খরচে আপনার পণ্যের মার্কেটিং করতে পারবেন। আর পণ্যের দাম নির্ধারণের সময় উৎপাদকের লক্ষ্যই থাকে মার্কেটিং খরচ যাতে উঠে আসে সেভাবে দাম নির্ধারণ করা নতুবা ব্যবসা লসের মুখে পড়বে।
তবে পণ্য এবং মার্কেটিং হতে হবে সময়োপযোগী। যদি পণ্য বাজারে আনার আগে আপনি ক্রেতাদের চাহিদার কথা না ভাবেন তাহলে আপনি লোকসান গুনবেন। যেমন- বাংলাদেশি প্রেক্ষাপটে একটি উদাহরণ দেই। ইউরোপ- আমেরিকাতে ডায়েট পেপসি, ডায়েট কোক বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। তখন সেসব দেশের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও ডায়েট কোক এবং পেপসি এনেছিলো ব্যবসায়ীরা।
তার জম্পেস মার্কেটিং করেছিলো। কিন্তু দেখা গেলো বাংলাদেশি লোকজন আগের কোক এবং পেপসিই কিনছে। ডায়েট কোল্ডড্রিঙ্কসে তাদের তেমন একটা আগ্রহ নেই কারণ তারা ততটা স্বাস্থ্য সচেতন নয়। তবে বর্তমানে সেই চিত্র পাল্টে গেছে। এখন তরূণেরা ডায়েট কোক এবং পেপসিই বেশি কিনছে কারণ তারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়। তাই বাজারে এসব পণ্যের বিক্রি বেড়েছে। সেইসাথে বেড়েছে ডায়েট দুধ, প্রোটিন পাউডার, প্রোটিন চকলেট বার বিক্রির সংখ্যা। এর মধ্যে বেশিরভাগ পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। কারণ এখনকার প্রজন্ম বডি বিল্ডিং এবং হেলদি লাইফস্টাইলের দিকে ঝুঁকছে।
মার্কেটিং কত প্রকার?
মার্কেটিং প্রধানত তিন প্রকার।
১. Traditional Marketing
২. Digital Marketing
৩. Word of Mouth
Traditional Marketing
আগে যে অবস্থায় মার্কেটিং করা হতো তাকে বলা হয় Traditional Marketing অথবা অফলাইন মার্কেটিং। যেমন- টিভি বিজ্ঞাপন, লিফলেট, ব্যনার, পত্রিকা ইত্যাদি। আগে এই ব্যবস্থায় মার্কেটিং বেশ সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল ছিলো। কিন্তু এখন ডিজিটাল মিডিয়া এসে সেই কাজ অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।
Digital Marketing
আজকাল ডিজিটাল মার্কেটিং ফেশ জনপ্রিয়। এই প্রযুক্তির যুগে আপনি ঘরে বসেই সোশ্যাল মিডিয়ায় পণ্যের প্রমোশন এবং মার্কেটিং করতে পারছেন। পেইড এডভারটাইজের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ গ্রাহকের কাছে আপনার পণ্য পৌছে যাচ্ছে। আর এখন সরাসরি মার্কেটে যেতে হয় না। অনলাইনে রিভিউ দেখেই আপনি পণ্য কিনতে পারেন।
এই রিভিউ হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটি অপরিহার্য অংশ। ধরুন আপনি একটি ফেসবুক পেইজ বা ওয়েবসাইট থেকে পণ্য কিনলেন। এবারে সেই পণ্যের ছবিসহ আপনি রিভিউ পেইজের ইনবক্সে পাঠাবেন। সেটা স্ক্রিনশট নিয়ে এডমিনরা আবার পেইজে পোস্ট করে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করার জন্য। তাদের প্রধান লক্ষ্যই থাকে পেইজে বা সাইটে বেশি বেশি ভিজিটর আনা আর পণ্য বিক্রি করা। সেইসাথে ক্রেতাদের বিশ্বস্ততা অর্জন করাও তাদের অন্যতম উদ্দেশ্য।
অন্যদিকে যদি আপনার পণ্য কিনতে গিয়ে খারাপ অভিজ্ঞতা হয় অথবা নষ্ট পণ্য ডেলিভারি দেয় তখন আপনি পেইজে পোস্ট করে অভিযোগ জানাতে পারবেন। আর অন্যদের সতর্ক করার জন্য একটি সৎ রিভিউ দিবেন। এতে অন্যরা পণ্য ক্রয় করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকবে।
Word of Mouth
মার্কেটিং এর এই টেকনিকটা আগেও ছিলো। এখনো আছে। আগে কি হতো? ধরুন আপনি মার্কেটে গেলেন। দোকানে অফারের বোর্ড ঝুলছে। ৪০℅ অথবা ৫০℅ ছাড় চলছে। তখন আপনি নিজেও সস্তায় পণ্য কিনলেন আর পরিচিতজনদের জানালেন যে, এত থেকে এত তারিখ ঐ শোরুমে ছাড় চলবে। তখন অন্যরাও সেখানে গিয়ে অফারে জিনিসপত্র কিনে নিয়ে আসলো। আগে পত্রিকা, ম্যাগাজিন, পোস্টারের মাধ্যমে অফারের খবর প্রচার করা হতো।
এখনো মানুষের মুখে মুখে, মেসেজিং এর মাধ্যমে মার্কেটিং করা হয়। কিভাবে? আপনি ফেসবুকে একটা কোম্পানির অফারের পোস্ট দেখলেন। সেটার লিংক আপনি কয়েকজনকে ফরোয়ার্ড করলেন। তখন তারাও সেটা সম্পর্কে জানতে পারলো এবং কোম্পানির আর পণ্যের উভয়েরই প্রচার হলো।
মার্কেটিং অফিসারের কাজ কি
একজন মার্কেটিং অফিসারের কাজ হলো চলমান বাজার সম্পর্কে গবেষণা করা আর ক্রেতাদের চাহিদার উপর নজর রাখা। সেইসাথে তাকে ভাবতে হবে কিভাবে উৎপাদিত পণ্যের বিক্রি বাড়ানো যায় আর মুনাফা অর্জন করা যায়। এই মার্কেটিং করতে হলে তাকে লোকের কাছে যেতে হবে। বাজারে বিক্রি, ঋতু, দ্রব্যমূল্যের দাম, সরবরাহ, ক্রেতার চাহিদা ইত্যাদি বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। পণ্যের প্রচারের সময় কখনো কখনো মার্কেটিং অফিসারেরা মানুষের আবেগকে ব্যবহার করে। পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে একটা গুজব ছড়িয়ে দিয়ে রাতারাতি একটি পণ্যকে চাহিদাসম্পন্ন করে তুলতে পারে। যেমন- করোনার শুরুর দিকে থানকুনি পাতা, পুদিনা পাতা খেলে নাকি করোনা হয় না এরকম গুজব ছড়িয়ে একরাতেই বিক্রি বাড়িয়ে দিয়েছিলো কয়েকগুণ। সেইসময় বাংলাদেশে পাঁচ টাকার মাস্ক পঞ্চাশ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
অফিসে চেয়ার- টেবিলে বসে কখনো মার্কেটের আসল অবস্থা বোঝা যায় না। তাই একজন মার্কেটিং অফিসারের চাকরি ফিল্ড জব হিসেবে গণণা করা হয়। সাধারণত আউটসাইড কাজের জন্য অল্পবয়সী তরুণ ছেলেমেয়েদের নিয়োগ দেয়া হয়। মার্কেটিং অফিসারদের ভালো বক্তাও হতে হয়। কথার মাধ্যমে পণ্যের গুণাবলী প্রচার করে ক্রেতাকে সেই পণ্যটি কিনতে উদ্বুদ্ধ করা হয়। তবে আজকাল মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোতে কাজ করতে হলে মার্কেটিং সম্পর্কে সবারই কম- বেশি ধারণা থাকতে হয়। কেননা তাদের প্রধান লক্ষ্যই থাকে পণ্য এবং সেবা বিক্রি করা।
একজন মার্কেটিং অফিসারের বেতন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ১৫০০০ থেকে শুরু হয়। আর সর্বোচ্চ ৮৫০০০- ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দেয়া হয়। তবে উন্নত বিশ্বে বেতন আরও বেশি। এছাড়া কাজের ফাঁকে অনলাইনে ফ্রিল্যান্সার মার্কেটার হিসেবেও আপনি কাজ করতে পারেন। যারা নামি- দামি ইউটিউবার, ব্লগার আছেন, তারা কন্টেন্টের পাশাপাশি পণ্যের মার্কেটিং করেও মাসে অনেক টাকা রোজগার করেন।
মার্কেটিং কেন প্রয়োজন?
মার্কেটিং এর পেছনে প্রতিটি কোম্পানি এত টাকা কেন ব্যয় করে? মার্কেটিং এর প্রয়োজনীয়তা কি? আগেই বলেছি মার্কেটিং এর প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে পণ্য বিক্রি করা। তাই সেই পণ্য সম্পর্কে ক্রেতাকে জানতে হবে। আর ক্রেতাকে এই মার্কেটিং এর মাধ্যমেই পণ্য সম্পর্কে অবহিত করা হয়।
তাছাড়া মার্কেটিং এর আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে মুনাফা অর্জন। আর তাই গ্রাহক সংখ্যা বাড়াতে বিভিন্ন সময় কোম্পানিগুলো নির্দিষ্ট পণ্যের উপর ছাড় দিয়ে থাকে। একটি পণ্য লোকের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই মার্কেটিং এর মাধ্যমে। আ্যাপলের আইফোন তার অন্যতম উদাহরণ।
এছাড়া কাস্টমার বাড়ানো আর ব্র্যান্ড তৈরি এবং বড় করাও মার্কেটিং এর উদ্দেশ্য। ডিজিটাল মিডিয়া এসে সেই কাজটা অনেক সহজ করে দিয়েছে। মার্কেটিং তথা প্রচারণার মাধ্যমেই আপনি আপনার পণ্য গ্রাহকের কাছে পৌছাতে পারবেন।
এই ছিলো আজকের মতো (মার্কেটিং অফিসারের কাজ কি)। পোস্টটি কেমন লাগলো দয়া করে কমেন্টে জানাবেন, যদি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যয় শেয়ার করবেন, পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।