প্রতিনিধি ৯ অগাস্ট ২০২৫ , ১:৩৮ পিএম প্রিন্ট সংস্করণ
সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্র সরকার রাশিয়া থেকে তেল কেনার প্রতিক্রিয়ায় ভারতের পণ্য আমদানির উপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, যা কার্যকর হবে আগামী ২৭ আগস্ট থেকে। এর ফলে, ভারতীয় পণ্যের উপর মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়াবে ৫০ শতাংশ। এই পদক্ষেপকে ভারত সরকার ‘অন্যায় ও অযৌক্তিক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই উচ্চ শুল্ক হার ভারতের রপ্তানি বাণিজ্য এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উপর একটি বড় আঘাত।
বর্তমানে, ভারত প্রতি বছর প্রায় ৮৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে থাকে। ৫০ শতাংশ শুল্কের কারণে এই রপ্তানি বাণিজ্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কারণ বেশিরভাগ ভারতীয় রপ্তানিকারকের পক্ষে এই পরিমাণ শুল্কের ধাক্কা সামলানো অসম্ভব। এর ফলে, আমেরিকান বাজারে ভারতীয় পণ্য অন্য দেশের পণ্যের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে না।
জাপানি ব্রোকারেজ ফার্ম নোমুরার মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপটি কার্যত ভারতের বিরুদ্ধে একটি বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার মতো, যা রাতারাতি বহু ভারতীয় পণ্যের রপ্তানি বন্ধ করে দেবে। এর ফলে, ভারতের টেক্সটাইল এবং জুয়েলারি শিল্পের মতো শ্রম-নিবিড় খাতগুলোতে মারাত্মক প্রভাব পড়বে, যা বহু শ্রমিকের কর্মসংস্থানকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে। কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির রাকেশ মেহরা স্বীকার করেছেন যে, এর ফলে মার্কিন বাজারে ভারতীয় টেক্সটাইল তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হারাবে।
এই বাণিজ্যিক বিপর্যয় মোকাবিলায় ভারতের হাতে আর মাত্র ১৯ দিন সময় আছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, এই পরিস্থিতি ভারতকে রাশিয়া, চীন এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাদের কৌশলগত সম্পর্ক নতুন করে সাজানোর একটি সুযোগ এনে দিয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, ভারত হয়তো রাশিয়ার সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্কে কিছু ছাড় দিতে পারে, বিশেষ করে অপরিশোধিত তেল আমদানির ক্ষেত্রে। তবে, ভারত সরকার জানিয়েছে যে তারা জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে কোনো আপস করবে না।
এদিকে, শুক্রবার সন্ধ্যায় এক্সে করা এক পোস্টে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে তার টেলিফোনে বিশদ আলোচনা হয়েছে এবং তারা ভারত-রাশিয়ার বিশেষ সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। প্রেসিডেন্ট পুতিন এ বছরই ভারত সফরে আসবেন বলেও নিশ্চিত করেছেন তিনি।
তবে, বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংকটের মুখে ভারত সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো রপ্তানিকারকদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রণোদনা দেওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনায় সফলভাবে এগিয়ে যাওয়া। ভারতের সাবেক গভর্নর উর্জিত প্যাটেল আশা প্রকাশ করেছেন যে, এই মাসে অনুষ্ঠিতব্য আলোচনায় কিছু অগ্রগতি হবে, যা এই সংকটকে সাময়িক করবে।