রাজনীতি

রাজনৈতিক ভবিষ্যতের মুখে আসিফ মাহমুদ: নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না, তবে জাতীয় রাজনীতিতে আগ্রহী

  প্রতিনিধি ১৪ অগাস্ট ২০২৫ , ৯:৫৪ এএম প্রিন্ট সংস্করণ

রাজনৈতিক ভবিষ্যতের মুখে আসিফ মাহমুদ: নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না, তবে জাতীয় রাজনীতিতে আগ্রহী

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ, যিনি সম্প্রতি স্থানীয় সরকার ও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন, নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে মুখ খুলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বাংলা সংবাদমাধ্যম ‘ঠিকানা’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি তার ভাবনা এবং গণ-অভ্যুত্থানের লক্ষ্য পূরণের অসমাপ্ত কাজগুলো নিয়ে কথা বলেছেন। যদিও তিনি জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি সরাসরি স্পষ্ট করেননি, তবে জাতীয় রাজনীতিতে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

আসিফ মাহমুদের এই সাক্ষাৎকারের মূল বিষয় ছিল তার রাজনৈতিক অভিলাষ এবং সম্প্রতি তার ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগের জবাব। মুরাদনগরের স্থানীয় রাজনীতিতে তার বাবা বিল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগকে তিনি প্রতিপক্ষের ‘অপপ্রচার’ বলে উড়িয়ে দেন। তার বাবার বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ড, শিক্ষক নিপীড়ন, এবং চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িতদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন যে, এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এই ‘অপপ্রচারের’ বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।

জাতীয় রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার বিষয়ে আসিফ মাহমুদ বলেন যে, তিনি জাতীয় পর্যায়ে কাজ করতে চান। সে কারণে স্থানীয় পর্যায়ে, যেমন কুমিল্লার মুরাদনগর থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যে কানাঘুষা চলছে, তা তিনি নাকচ করে দেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্র হিসেবে ঢাকা শহরই আমার জন্য সুবিধাজনক স্থান।”

বর্তমান সরকারে তার ভূমিকা সম্পর্কে তিনি বলেন যে, তিনি ‘পতাকাবাহী গাড়ি বা ক্ষমতার মোহের’ জন্য নন, বরং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষে সোচ্চার থাকতে এবং এর লক্ষ্য পূরণের জন্যই সরকারে আছেন। তিনি উল্লেখ করেন, জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়া গেলেও জুলাই সনদ এবং স্থানীয় সরকারের সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন এখনো বাকি আছে। এই দায়িত্বগুলো শেষ না হলে ঐতিহাসিক দায় থেকে যাবে বলে তিনি মনে করেন।

সাক্ষাৎকারে আসিফ মাহমুদ সেনাবাহিনী ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সম্পর্ক নিয়েও কথা বলেন। মাস কয়েক আগে তিনি একটি ভিডিও বক্তব্যে বলেছিলেন যে, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান প্রথমে ড. ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে মানতে চাননি। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি সরকার গঠনের আগের একটি ঘটনা। বঙ্গভবনের এক বৈঠকে সেনাপ্রধান ড. ইউনূসের নাম প্রস্তাব হলে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের আপত্তির কারণে তিনি প্রথমে অসম্মতি জানান। যদিও পরে তিনি মেনে নেন, তবে ‘বুকে পাথরচাপা দেওয়া’ শব্দ ব্যবহার করেন। আসিফ মাহমুদ স্পষ্ট করে বলেন, সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার বা সরকারের কোনো ব্যক্তিগত বিরোধ নেই, তবে সেনাপ্রধানের সঙ্গে দ্বিমত শুধু আওয়ামী লীগ প্রশ্নেই।

বর্তমান সরকারে ক্ষমতা বিভিন্ন কেন্দ্রে বিভক্ত, এই অভিযোগ তিনি স্বীকার করে নেন। তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর সামরিক বাহিনী একটি ক্ষমতার কেন্দ্রে পরিণত হয় এবং উপদেষ্টারাও বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তি থেকে এসেছেন। এর ফলে ক্ষমতার একক কোনো কেন্দ্র নেই। তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে একটি মহল জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে আনার চেষ্টা করছে এবং ভালো ইমেজ সম্পন্ন আওয়ামী লীগ নেতাদেরও জাতীয় পার্টির হয়ে নির্বাচনে আনার পাঁয়তারা চলছে।

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিলম্ব প্রসঙ্গে আসিফ মাহমুদ বলেন যে, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভায় নির্বাচিত প্রতিনিধি না থাকায় নাগরিক সেবা ব্যাহত হচ্ছে, যার দায় তার ওপর পড়ছে। তিনি জানান, সরকার এই নির্বাচন আয়োজনে আগ্রহী হলেও বিএনপি ও তাদের কিছু সহযোগী দল তাতে রাজি হচ্ছে না, যার কারণে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হচ্ছে না।