জাতীয়

রোহিঙ্গারা এখন মাদক ও অপরাধের কেন্দ্র, দিনে উদ্ধার হচ্ছে ৫৪ হাজার ইয়াবা!

  প্রতিনিধি ২৫ অগাস্ট ২০২৫ , ১০:৫০ এএম প্রিন্ট সংস্করণ

রোহিঙ্গারা এখন মাদক ও অপরাধের কেন্দ্র, দিনে উদ্ধার হচ্ছে ৫৪ হাজার ইয়াবা!

কক্সবাজার, বাংলাদেশ— গত আট বছরে কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা এখন কেবল শরণার্থী নয়, বরং মাদক ব্যবসা ও বিভিন্ন গুরুতর অপরাধের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, মিয়ানমার থেকে সীমান্তপথে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ মাদকের চালান আসছে, যার প্রধান বাহক ও পাচারকারী হলো রোহিঙ্গারা।

মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে ২৭১ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে, যার মধ্যে ৬৩ কিলোমিটার জলপথ এবং বাকি ২০৮ কিলোমিটার পাহাড়ি স্থলপথ। এই পথ দিয়েই প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫৪,৮৮৪ পিস ইয়াবা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। শুধু ইয়াবা নয়, ক্রিস্টাল মেথ (আইস), হেরোইন, কোকেন, গাঁজা, আফিম, বিদেশি মদ এবং ফেনসিডিলের মতো অন্যান্য মাদকের চালানও নিয়মিত ঢুকছে। সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর মাদক উদ্ধারের পরিমাণ বেড়েই চলেছে।

১৩ আগস্ট, বিজিবির কক্সবাজার রিজিওন এক বছরে উদ্ধার করা বিপুল পরিমাণ মাদক ধ্বংস করে, যা এই ভয়াবহতার চিত্র তুলে ধরে। এর মধ্যে ছিল ২ কোটিরও বেশি ইয়াবা, ১৪০ কেজি ক্রিস্টাল মেথ, ২৫ কেজির বেশি হেরোইন, ৪ কেজির বেশি কোকেন, এবং অন্যান্য মাদকদ্রব্য। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র মতে, মাদক পাচারে ধরা পড়া ৮০ শতাংশ পাচারকারীই রোহিঙ্গা।

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরগুলো এখন মাদকের মজুদকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এই কেন্দ্রগুলো থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মাদক ছড়িয়ে দেওয়া হয়। অনুসন্ধানে দেখা যায়, রোহিঙ্গারা কেবল মাদক আনাই নয়, বরং নিজেরাই দেশের ভেতরে তা পৌঁছে দেওয়ার কাজটিও করছে। মোহাম্মদ ইলিয়াস নামের এক রোহিঙ্গা মাদক কারবারি ইয়াবা ব্যবসার টাকায় মহেশখালীতে ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে বাংলাদেশি নাগরিক বনে গেছেন। তিনি কক্সবাজারে শিক্ষকতার আড়ালে ফার্মেসি ব্যবসা শুরু করেন এবং ইয়াবা কারবারের মাধ্যমে বিলাসবহুল বাড়ি তৈরি করেন। সম্প্রতি তিনি ফেনীতে ৩২ হাজার ইয়াবাসহ ধরা পড়লে তার অপরাধ সাম্রাজ্যের অনেক তথ্য ফাঁস হয়। জানা গেছে, ইলিয়াস এবং তার মতো আরও অনেক রোহিঙ্গা নিজেদের অপরাধ ঢাকতে বিভিন্ন পেশার আড়ালে আশ্রয় নিয়েছে।

কেবল মাদক নয়, রোহিঙ্গারা এখন অপহরণ ও চাঁদাবাজির মতো অপরাধেও জড়িয়ে পড়েছে। ২০১৭ সালে স্থানীয়রা যখন নিজেদের ঘরবাড়ি রোহিঙ্গাদের জন্য ছেড়ে দিয়েছিল, এখন তারাই রোহিঙ্গাদের হাতে জিম্মি। প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গার সামনে ৬ লাখ স্থানীয় বাসিন্দা এখন সংখ্যালঘু। রোহিঙ্গা শিবির ও পাহাড়ি এলাকায় আরসা, আরএসও, ইসলামী মাহাজসহ অন্তত সাতটি সশস্ত্র গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে, যাদের সদস্যরা মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা, চাঁদাবাজি এবং অপহরণে জড়িত।

সম্প্রতি টেকনাফে সাতজন ব্যক্তি অপহৃত হন, যাদের মধ্যে পাঁচজন মুক্তিপণ দিয়ে মুক্তি পেয়েছেন। এ ছাড়া চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে রোহিঙ্গা শিবিরকেন্দ্রিক বিভিন্ন অপরাধের কারণে ২৩১টি মামলা হয়েছে, যার মধ্যে ১৫টি খুনের মামলা। ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত তিন শতাধিক খুন হয়েছে, যার জন্য ২৮৭টি মামলা করা হয়েছে।

এসব ঘটনা স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ইস্যু এখন কেবল মানবিক সংকট নয়, বরং স্থানীয়দের নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলার জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।