প্রতিনিধি ২৪ অগাস্ট ২০২৫ , ১১:৪৮ এএম প্রিন্ট সংস্করণ
দেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন, যিনি বর্তমানে ক্যামেরার সামনে কম এলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবসময় সরব। বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সামাজিক ইস্যুতে নিজের মতামত প্রকাশ করে তিনি প্রায়শই আলোচনায় থাকেন। এবার তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর নেতাদের বৈঠকের পর। ওই বৈঠকের একটি ভিডিও দেখে শাওন প্রশ্ন তুলেছেন, “মুক্তিযুদ্ধের নাম কি তবে ‘৭১ ডিল’ হয়ে গেল?”
শনিবার (২৩ আগস্ট) ঢাকার পাকিস্তান হাইকমিশনে পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ ইসহাক দারের সঙ্গে বৈঠক করে এনসিপি’র ৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। বৈঠক শেষে এনসিপি নেতারা সাংবাদিকদের জানান, দুই দেশের মধ্যে যে শত্রুভাবাপন্ন সম্পর্ক ছিল, সেখান থেকে উন্নতির সুযোগ রয়েছে। তারা আরও বলেন, এই উন্নতির জন্য ‘একাত্তরের ইস্যু’ অবশ্যই সমাধান করা উচিত। এই আলোচনার সময়েই এনসিপি’র এক নেতা, নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী, ‘৭১ ডিল’ শব্দটি ব্যবহার করেন, যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং তীব্র সমালোচনার জন্ম দেয়।
এই ভিডিওটি দেখার পর মেহের আফরোজ শাওন তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট দেন, যেখানে তিনি এনসিপি নেতাদের বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেন। শাওন লেখেন, “এই ‘ঘিলু’ মহোদয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়ে গেলেন কবে? ফরেন পলিসি নিয়ে পাকিস্তানের ফরেন মিনিস্ট্রির সাথে মিটিং করছেন!” তার এই মন্তব্য এনসিপি নেতাদের যোগ্যতা ও উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
শাওন আরও লেখেন, ওই নেতা তার বক্তব্যে বলেছেন যে ‘গত ১৫/২০ বচ্ছরে’ পাকিস্তান অনেক চেষ্টা করেও তাদের ‘ভালো ভালো জিনিস’ আমাদের শেখাতে পারেনি। এর জবাবে শাওন বিদ্রুপ করে বলেন, “যাক ভালোই হলো, ‘বিল্ডিং রিলেশনশিপ’-এর পর এখন বাংলাদেশ সব শিখে নিবে।” এই কথাগুলো ব্যঙ্গাত্মকভাবে তুলে ধরে যে, বাংলাদেশের জনগণের কাছে পাকিস্তানের কাছ থেকে কিছু শেখার কোনো আগ্রহ নেই।
পোস্টের পরের অংশে শাওন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি তোলেন। এনসিপি’র ওই নেতা যখন বলেন যে “৭১ ডিলের একটা ইস্যু” আছে, যেটা দ্রুত সমাধান করা উচিত, তখন শাওন বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের নাম কি তবে ‘৭১ ডিল’ হয়ে গেল!” এই প্রশ্নটি বাংলাদেশের জনগণের হৃদয়ের কথা বলে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ কোনো ‘ডিল’ বা বাণিজ্যিক চুক্তি ছিল না; এটি ছিল লক্ষ লক্ষ মানুষের আত্মত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা। এই শব্দচয়ন মুক্তিযুদ্ধের মর্যাদা ও আবেগকে অপমান করে বলে মনে করছেন অনেকেই।
শাওনের এই পোস্টটি দ্রুতই ভাইরাল হয়ে যায় এবং অসংখ্য অনুরাগী ও নেটিজেন তার মন্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। মন্তব্যের ঘরে অনেকেই এনসিপি নেতাদের উদ্দেশ্য ও কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। একজন মন্তব্যকারী প্রশ্ন করেন, “কেন পাকিস্তান? আর আপনাদের এই দায়িত্ব কে দিয়েছে?” আরেকজন লেখেন, “পাকিস্তান চাই না। পাকিস্তানের কিছু ডিল চাই না।” অন্য একজন লিখেছেন, “ওনাদের কাছ থেকে কি শিখবো। বুঝলাম না কিছুই।” এই মন্তব্যগুলো থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, সাধারণ মানুষ এই ধরনের রাজনৈতিক কার্যকলাপকে কীভাবে দেখছে।
মেহের আফরোজ শাওনের এই সাহসী পদক্ষেপ প্রমাণ করে যে তিনি কেবল একজন অভিনেত্রী নন, বরং একজন সচেতন নাগরিকও। তিনি দেশের সম্মান ও ইতিহাসের প্রতি কোনো ধরনের আপোস দেখতে রাজি নন। তার এই পোস্ট কেবল একটি সমালোচনামূলক লেখা নয়, বরং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অগাধ ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ। এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করল, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও মর্যাদা নিয়ে কোনো ধরনের আপোস দেশের মানুষ মেনে নেবে না।