খেলাধুলা

দুবাইয়ে শুধু টাকা কথা বলে না, চিৎকারও করে!

  প্রতিনিধি ২৩ অগাস্ট ২০২৫ , ৯:২৪ এএম প্রিন্ট সংস্করণ

দুবাইয়ে শুধু টাকা কথা বলে না, চিৎকারও করে!

দুবাই: তারকাদের বিনিয়োগের নতুন ঠিকানা

টাকার ঝনঝনানি আর ঝলমলে আলোয় দুবাই এখন কেবল একটি শহর নয়, এটি বিশ্বজুড়ে তারকাদের, বিশেষ করে ক্রীড়াবিদদের স্বপ্নের ঠিকানা। গত এক দশকে এই মরুর শহরটি লাভজনক রিয়েল এস্টেট আর বিলাসবহুল জীবনযাপনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এর প্রধান কারণ, দুবাইয়ের আকর্ষণীয় কর সুবিধা। এখানে কোনো সম্পত্তি কর, উত্তরাধিকার কর বা পুঁজি বাজারের ওপর কর নেই। ফলে খেলোয়াড়দের জন্য এটি এমন এক জায়গা, যেখানে তারা ক্যারিয়ারের বিশাল আয়কে সর্বোচ্চ স্তরে নিয়ে যেতে পারেন।

তবে শুধু অর্থনৈতিক সুবিধা নয়, দুবাইয়ের অসাধারণ জীবনযাপনের অভিজ্ঞতাও তারকাদের এখানে আকৃষ্ট করছে। অনেকেই অবসর কাটানো বা স্থায়ী বসবাসের জন্য এখানে বাড়ি কিনেছেন।

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর দুবাইয়ে বিলাসবহুল বিনিয়োগ

ফুটবল কিংবদন্তি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো শুধু ছুটি কাটাতে দুবাই যান না, তার বিনিয়োগের পরিমাণও বেশ বড়। জুমেইরা বে আইল্যান্ডে প্রায় ৩০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে তিনি একটি বিশাল জমি কিনেছেন, যেখানে ভবিষ্যতে তার স্বপ্নের ‘রাজপ্রাসাদ’ তৈরি হবে বলে শোনা যায়। এছাড়া, ডাউনটাউন দুবাইয়ের জনপ্রিয় রেস্তোরাঁ ‘টাটেল’-এর একজন অংশীদার তিনি। গুজব আছে, বুর্জ খলিফার সামনে একটি দৃষ্টিনন্দন পেন্টহাউসও তার মালিকানায় আছে।

বিনিয়োগের পাশাপাশি রোনালদো প্রায়ই তার পরিবার নিয়ে দুবাইয়ে ছুটি কাটাতে আসেন। এখানকার মরুভূমি ভ্রমণ, ওয়াটার স্পোর্টস এবং আধুনিক স্পোর্টস ফ্যাসিলিটি তার পছন্দের তালিকায়। দুবাই গ্লোব সকার অ্যাওয়ার্ডসের মতো অনুষ্ঠানে তাকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর বা অতিথি হিসেবেও দেখা যায়।

বেকহাম দম্পতির পাম জুমেইরার ভিলা

ডেভিড বেকহাম এবং তার স্ত্রী ভিক্টোরিয়ার সম্পত্তির তালিকা ইউরোপ থেকে আমেরিকা পর্যন্ত বিস্তৃত। তাদের সংগ্রহে রয়েছে লন্ডনের ক্ল্যাসিক টাউনহাউস, কটসওল্ডের কান্ট্রি হাউস, মায়ামির বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট এবং দুবাইয়ের ভিলা। ২০০২ সালে তারা পাম জুমেইরায় প্রায় ৫.৯ মিলিয়ন দিরহামে একটি ভিলা কিনেছিলেন। ২০০৯ সালে বেকহাম এটি ভিক্টোরিয়ার মা-বাবাকে উপহার দেন, যার দাম তখন প্রায় ৯.৯ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল। একই বছর তারা বুর্জ খলিফায় ১০.৮ মিলিয়ন দিরহামে আরেকটি অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন। এটিতে চারটি সুইমিং পুল, একটি চারতলা হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস ক্লাব, দুটি জিম, লাইব্রেরি ও রেস্তোরাঁর মতো অত্যাধুনিক সুবিধা রয়েছে।

নেইমারের স্কাই ম্যানশন ও শুমাখারের ব্যক্তিগত দ্বীপ

ব্রাজিলের তারকা ফুটবলার নেইমার দুবাইয়ে একটি আকাশছোঁয়া ‘স্কাই ম্যানশন পেন্টহাউস’ কিনেছেন। বুগাত্তি কার ব্র্যান্ডের সহযোগিতায় তৈরি হচ্ছে এই বিলাসবহুল ভবন। এই পেন্টহাউসে নিজস্ব গাড়ি ওঠানোর লিফট থাকবে, যা সরাসরি গাড়িটিকে ফ্ল্যাটে পৌঁছে দেবে। এর প্রতিটি ইউনিটে থাকবে ব্যক্তিগত সুইমিং পুল, যেখান থেকে বুর্জ খলিফার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখা যাবে।

ফর্মুলা ওয়ানের কিংবদন্তি মাইকেল শুমাখার দুবাইয়ে একটি পুরো দ্বীপের মালিক। ২০০৬ সালে দুবাইয়ের ক্রাউন প্রিন্স শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম তাকে এটি উপহার দিয়েছিলেন। ‘দ্য ওয়ার্ল্ড আইল্যান্ডস’ প্রকল্পের অংশ এই দ্বীপটি ওপর থেকে পৃথিবীর মানচিত্রের মতো দেখায়।

ফেদেরার ও সানিয়ার স্বপ্নের ঠিকানা

টেনিস কিংবদন্তি রজার ফেদেরার ২০১৪ সালে সুইজারল্যান্ডের বাইরে দুবাইকে তার দ্বিতীয় বাড়ি হিসেবে বেছে নেন। তিনি প্রায়ই দুবাইয়ের লে রেভ টাওয়ারে থাকেন, যার ফরাসি নামের অর্থ হলো ‘দ্য ড্রিম’। এখানে একটি বোতাম টিপেই ব্যক্তিগত হেলিকপ্টার বা প্রাইভেট জেট ডেকে নেওয়া যায়।

ভারতের টেনিস তারকা সানিয়া মির্জা দুবাইকে নিজের দ্বিতীয় বাড়ি বানিয়েছেন। পাকিস্তানি ক্রিকেটার শোয়েব মালিককে বিয়ে করার পর তারা পাম জুমেইরার একটি বিলাসবহুল ভিলায় থাকতেন। বিবাহ বিচ্ছেদের পরেও সানিয়া তার ছেলের সঙ্গে সেখানেই আছেন। ২০২১ সালে ১০ বছরের গোল্ডেন ভিসা পাওয়ার পর তিনি দুবাইয়ে একটি টেনিস একাডেমি খোলেন। দুবাই শহরের প্রতি অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০২৪ সালের নভেম্বরে তাকে ‘দুবাই স্পোর্টস অ্যাম্বাসেডর’ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

দুবাই এখন শুধু তার অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য নয়, বরং বিশ্বসেরা ক্রীড়াবিদদের স্বপ্নের ঠিকানা হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেছে।