প্রতিনিধি ২৩ অগাস্ট ২০২৫ , ১২:৩১ পিএম প্রিন্ট সংস্করণ
কুমিল্লায় চলন্ত বাসে এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে ধর্ষণচেষ্টা ও শ্লীলতাহানির অভিযোগে দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই জঘন্য অপরাধের কারণে তাদের দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এই ঘটনার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রতিবাদস্বরূপ তারা সেন্ট মার্টিন পরিবহনের দুটি বাস জব্দ করে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসেন।
শুক্রবার (২২ আগস্ট) সকাল ৯টার দিকে কুমিল্লার পদুয়ারবাজার বিশ্বরোড এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মো. হোসেন আলী (২৫) এবং মো. আলী হোসেন (২৩)। তবে এই পাশবিক ঘটনার পর পিচ্চি রাসেল (৩২), নূর আলম এবং সৌরভ নামের আরও তিনজন পালিয়ে গেছে।
সূত্র অনুযায়ী জানা গেছে, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী ঢাকার উদ্দেশে কোটবাড়ী বিশ্বরোড থেকে সেন্ট মার্টিন পরিবহনের একটি বাসে উঠেছিলেন। বাসটি পদুয়ারবাজার বিশ্বরোড থেকে ইউ-টার্ন নেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সেটি শিক্ষার্থীকে নিয়ে চৌদ্দগ্রামের দিকে চলে যায়। এরপর বাসটি সুয়াগাজী নামক স্থান থেকে ইউ-টার্ন নিয়ে আবার পদুয়ারবাজারে ফিরে আসে। সেই সময় বাসে চালক, চালকের সহকারীসহ মাত্র পাঁচজন ছিল।
হঠাৎ ওই পাঁচজন দুর্বৃত্ত শিক্ষার্থীর গলায় ছুরি ধরে টাকা-পয়সা, গহনা ছিনতাই করে এবং হাত-পা বেঁধে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এই বর্বরতার সময় শিক্ষার্থী তাদের হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করলে অভিযুক্তরা তার হাতে কামড় বসিয়ে দেয়।
এই ঘটনা জানাজানি হলে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করেন। এ সময় তারা দুজনকে হাতেনাতে আটক করলেও বাকি তিনজন পালিয়ে যায়।
ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা বাস মালিক এবং আটককৃতদের ক্যাম্পাসে নিয়ে আসতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এরপর দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। পরিস্থিতি শান্ত করতে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীও আসে।
পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হলে শিক্ষার্থীরা আলোচনায় বসেন এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযুক্তদের দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে, পালিয়ে যাওয়া বাকি তিন অভিযুক্তকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করতে পুলিশকে আলটিমেটাম দেন শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে কুমিল্লা সদর দক্ষিণের উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুবাইয়া খানম বলেন, “আমি ঘটনাস্থলে গিয়েই শিক্ষার্থীদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযুক্তদের সাজা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। শুরুতে তারা মানতে না চাইলেও পরে বিষয়টি মেনে নেয়।”
কুমিল্লা জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান বলেন, “গ্রেপ্তার হওয়া দুজনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, বাকি অভিযুক্তদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আশা করি পুলিশ প্রশাসনের এতে কোনো গাফিলতি থাকবে না।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল হাকিম বলেন, “খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে এসে দেখি পরিস্থিতি উত্তপ্ত। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, সেনাবাহিনী এসেও হিমশিম খাচ্ছিল। অবশেষে একটি সুরাহা হয়েছে। অভিযুক্তদের দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। আমি চাই অভিযুক্তরা সর্বোচ্চ শাস্তি পাক।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “আমাদের একজন নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে যে মধ্যযুগীয় বর্বরতা হয়েছে, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। দুজন ধরা পড়েছে এবং পুলিশ প্রশাসন কথা দিয়েছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাকি তিনজনকে গ্রেপ্তার করবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাদী হয়ে শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণচেষ্টার মামলা করবে এবং পুলিশ এক মাসের মধ্যে সেই মামলার চার্জশিট দেবে, যাতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়।”