প্রতিনিধি ২৫ অগাস্ট ২০২৫ , ৯:৩৩ এএম প্রিন্ট সংস্করণ
ভারতের রাজনীতিতে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে দক্ষিণী সিনেমার সুপারস্টার থালাপতি বিজয়। সম্প্রতি তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে প্রবেশ করেছেন এবং একের পর এক সাহসী মন্তব্য করে রাজনৈতিক অঙ্গনে ঝড় তুলেছেন। গত ২২শে আগস্ট তামিলনাড়ুর মাদুরাইতে তার এক জনসভায় প্রায় ৪ লাখ মানুষের বিশাল সমাবেশ প্রমাণ করে দিয়েছে যে তিনি শুধু রূপালি পর্দার নায়ক নন, তামিলনাড়ুর সাধারণ মানুষের হৃদয়েও তার শক্ত অবস্থান রয়েছে। এই সমাবেশেই তিনি ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপিকে ‘আদর্শিক শত্রু’ হিসেবে আখ্যায়িত করে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেন।
মাদুরাইতে দেওয়া তার বক্তব্যগুলো মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। লাখো মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি হুঙ্কার দিয়ে বলেন, “জঙ্গলে শেয়াল, চিতার মতো অনেক প্রাণীই থাকে। কিন্তু সিংহ থাকে একটাই। সিংহ একা হলেও সবসময় সেটি সিংহই থাকবে। তামিলগা ভেট্রি কাজাগাম (টিভিকে) কাউকে ভয় পায় না। পুরো তামিলনাড়ু আমাদের সঙ্গে আছে। আসুন, আমরা ফ্যাসিবাদী বিজেপি ও বিষাক্ত ডিএমকে’র বিরুদ্ধে একসঙ্গে রুখে দাঁড়াই।” তার এই বক্তব্য দলের শক্তি ও তার নিজের রাজনৈতিক দৃঢ়তার এক স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে।
থালাপতি বিজয়ের রাজনৈতিক যাত্রা হঠাৎ করে শুরু হয়নি। এর নেপথ্যে রয়েছে তার দীর্ঘদিনের ফ্যানক্লাব ‘বিজয় মাক্কাল ইয়াক্কালাম’। ২০২১ সালের স্থানীয় নির্বাচনে এই ফ্যানক্লাব থেকে অংশ নিয়ে তারা ১৬৯ আসনের মধ্যে ১১৫টিতে জয়লাভ করে, যা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে তাকে নিয়ে আলোচনার জন্ম দেয়। এই অপ্রত্যাশিত সাফল্যই তার রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার জল্পনাকে আরও জোরালো করে তোলে। সেই গুঞ্জনকে সত্যি করে চলতি বছর তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ‘তামিলগা ভেট্রি কাজাগাম’ নামের রাজনৈতিক দল গঠন করেন।
রাজনীতিতে প্রবেশের আগেও তার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে রাজনৈতিক চেতনা স্পষ্ট ছিল। কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন নীতির বিরুদ্ধে তিনি বারবার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তামিলনাড়ুর নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, চিকিৎসকদের প্রবেশিকা পরীক্ষা এনইইটি-এর মতো বিতর্কিত বিষয়গুলোতে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোধিতা করে এসেছেন। পেট্রোল ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে তিনি ভোটকেন্দ্রে সাইকেল চালিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন, যা তার প্রতিবাদী সত্তার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। এছাড়া, চলতি বছর রমজানে মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে ইফতার করে তিনি সম্প্রীতির বার্তা দিয়েছেন। এসব ঘটনা তাকে শুধু একজন অভিনেতা নয়, জনগণের একজন প্রকৃত প্রতিনিধি হিসেবে তুলে ধরেছে।
বিজয় তার সিনেমায় যেমন একজন দৃঢ় ও সাহসী নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেন, তার রাজনৈতিক অঙ্গনে আগমনও ঠিক ততটাই নায়কোচিত। ‘লিও’, ‘মার্শাল’, ‘সরকার’, ‘থেরী’-এর মতো ব্যবসাসফল ও জনপ্রিয় সিনেমায় তার বলিষ্ঠ চরিত্রগুলো দর্শকদের মন জয় করেছে। রাজনীতির মাঠেও তার এই ‘নায়কোচিত’ ইমেজ তাকে এক ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে থালাপতি বিজয়ের আগমন তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে এক নতুন মোড় আনতে চলেছে। তার দল তামিলগা ভেট্রি কাজাগাম (টিভিকে) বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ডিএমকে-কে এক কঠিন পরীক্ষার মুখে ফেলতে পারে। তার জনপ্রিয়তা, রাজনৈতিক সাহস এবং জনগণের প্রতি তার অঙ্গীকার তাকে তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে এক শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এখন দেখার বিষয়, থালাপতি বিজয় সিনেমার মতো বাস্তব জীবনেও একজন সফল রাজনৈতিক নেতা হয়ে উঠতে পারেন কিনা।