প্রতিনিধি ১৫ অগাস্ট ২০২৫ , ১১:৪০ এএম প্রিন্ট সংস্করণ
গাজায় ইসরায়েলি হামলার ভয়াবহতা ক্রমাগত বাড়ছে, আর এর প্রভাব এখন বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনেও স্পষ্ট। সম্প্রতি ফিলিস্তিনি ক্রীড়াবিদদের ওপর ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর আক্রমণ এবং ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনা সামনে আসার পর ফুটবল বিশ্বের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বরা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
গত বৃহস্পতিবার উয়েফা (UEFA) সাবেক ফিলিস্তিনি ফুটবলার সুলেইমান আল-ওবাইদের মৃত্যুর খবর প্রকাশ করে। তবে তাদের বিবৃতিতে মৃত্যুর কোনো কারণ বা প্রেক্ষাপট উল্লেখ করা হয়নি। এতে ক্ষুব্ধ হন লিভারপুল ও মিশরের তারকা ফুটবলার মোহাম্মদ সালাহ। তিনি উয়েফার পোস্টটি শেয়ার করে সরাসরি প্রশ্ন তোলেন, “আপনারা কি বলতে পারেন, তিনি কীভাবে, কোথায় এবং কেন মারা গেলেন?” ফিলিস্তিন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন পরবর্তীতে নিশ্চিত করে যে, আল-ওবাইদ দক্ষিণ গাজায় মানবিক সহায়তার জন্য অপেক্ষা করার সময় ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন।
এই ঘটনা ক্রীড়াঙ্গনে ফিলিস্তিনের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা আরও জোরালো করে তুলেছে। সালাহর মতো একজন বিশ্বমানের খেলোয়াড়ের এমন প্রতিবাদ উয়েফার মতো একটি প্রভাবশালী সংস্থার ওপর সরাসরি চাপ তৈরি করেছে।
সাবেক মিশরীয় ফুটবলার মোহাম্মদ আবুত্রিকা সম্প্রতি লিভারপুল ও ক্রিস্টাল প্যালেসের মধ্যকার কমিউনিটি শিল্ড ম্যাচের সম্প্রচারের সময় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেন। তিনি ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ করার জন্য ফিফা এবং উয়েফা-কে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ইসরায়েল এখন পর্যন্ত ৭৬০ জন ফিলিস্তিনি ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে, যার মধ্যে ৪২০ জন ফুটবলার। এ ছাড়া ১৪০টি ক্রীড়া অবকাঠামো সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা হয়েছে।
আবুত্রিকা স্মরণ করিয়ে দেন যে, ইউক্রেনে হামলার কারণে রাশিয়াকে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “রাশিয়াকে নিষিদ্ধ করা হলে ইসরায়েলি দখলদারিত্ব কখন থামানো হবে? আমরা শুধু কথার ফুলঝুরি চাই না, আমরা বাস্তব পদক্ষেপ চাই।” আবুত্রিকার এই মন্তব্য সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থাগুলোর দ্বৈত নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
উয়েফা সাধারণত ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক ফুটবলে অবস্থান নিয়ে সরাসরি মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকে। তবে, তাদের সাধারণ সম্পাদক থিওডর থিওডোরিডিস বলেছেন, “রাশিয়া এবং ইসরায়েলের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। যুদ্ধ শুরুর প্রেক্ষাপটও আলাদা।”
তবে উয়েফার সাম্প্রতিক কিছু পদক্ষেপ তাদের অবস্থানকে আরও জটিল করেছে। পিএসজি ও টটেনহ্যামের মধ্যকার সুপার কাপ ম্যাচের আগে তারা একটি ব্যানার তুলে ধরে, যেখানে লেখা ছিল, “শিশু হত্যা বন্ধ করুন, বেসামরিক মানুষ হত্যা বন্ধ করুন।” যদিও ব্যানারটিতে গাজা বা ফিলিস্তিনের নাম উল্লেখ করা হয়নি, উয়েফার একজন কর্মকর্তা এটিকে “রাজনৈতিক নয়, মানবতার বার্তা” হিসেবে বর্ণনা করেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ১৭ হাজারের বেশি শিশু নিহত হয়েছে। এই ভয়াবহ বাস্তবতার মুখে উয়েফা তাদের শিশু ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে গাজার শিশুদের জন্য মানবিক সহায়তা, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করেছে। একই সাথে তারা দুটি ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিশুকে ম্যাচ পরবর্তী মেডেল প্রদান অনুষ্ঠানে যুক্ত করে।
উয়েফা সভাপতি আলেক্সান্ডার সেফেরিন বলেন, “যুদ্ধ চালানো প্রাপ্তবয়স্করা যাই ভাবুক না কেন, শিশুদের কোনো দোষ নেই। তারা প্রতিদিন মারা যাচ্ছে। আমরা তাদের পাশে দাঁড়াতে চাই, যাতে তারা অন্তত কিছুটা শান্তি ও আশার মুহূর্ত খুঁজে পায়।”
এই মানবিক পদক্ষেপগুলো প্রশংসার যোগ্য হলেও, ফুটবল তারকাদের প্রশ্ন এবং আবুত্রিকার মতো খেলোয়াড়দের সরাসরি আহ্বান উয়েফা ও ফিফার ওপর চাপ বাড়িয়ে চলেছে। কারণ, অনেকেই মনে করেন, শুধু মানবিক সহায়তাই যথেষ্ট নয়; রাজনৈতিক এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া এখন সময়ের দাবি। গাজায় নিহত ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ এবং ৫ লক্ষাধিক অনাহারে থাকা মানুষের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর আরও কঠোর ভূমিকা পালন করা জরুরি।