খেলাধুলা

দুর্নীতির কালো ছায়া: বিপিএলের ঠিকানাহীন ভবিষ্যতের সাথে বাড়ছে জুয়ার জাল!

  প্রতিনিধি ১৯ অগাস্ট ২০২৫ , ১১:৩৪ এএম প্রিন্ট সংস্করণ

দুর্নীতির কালো ছায়া: বিপিএলের ঠিকানাহীন ভবিষ্যতের সাথে বাড়ছে জুয়ার জাল!

বাংলাদেশের জনপ্রিয় ঘরোয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্ট বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)-এর পরবর্তী আসর কবে শুরু হবে, তা এখনো অনিশ্চিত। ডিসেম্বরে হওয়ার কথা থাকলেও শোনা যাচ্ছে তা মে মাসে পিছিয়ে যেতে পারে। তবে টুর্নামেন্টের সময়সূচি নিয়ে যতই ধোঁয়াশা থাকুক না কেন, জুয়া আর দুর্নীতির কালো থাবা ঠিকই বিস্তার লাভ করছে। সম্প্রতি এক তরুণ পেসারকে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যা থেকে বেরিয়ে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য।

কেঁচো খুঁড়তে সাপ!

বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে অস্ট্রেলিয়া সফরকারী ওই তরুণ পেসারকে প্রস্তাবটি দিয়েছেন তার সাবেক এক সতীর্থ, যিনি গত মৌসুমে ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে একই দলে খেলেছেন। বিষয়টি জানার পাঁচ দিনের মধ্যেই তরুণ ক্রিকেটারটি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি) খবরটি জানান। বিসিবির নির্দেশনা অনুযায়ী, তাদের দুর্নীতিবিরোধী বিভাগ (আকু) তৎক্ষণাৎ তদন্তে নামে। অনেক চেষ্টার পর অভিযুক্ত ক্রিকেটারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন।

তবে এই ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে আকু নজরদারিতে রেখেছে আরও একজন পুরোনো অভিযুক্তকে। যিনি গত বিপিএলের আসরে স্পট ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। যদিও অদৃশ্য চাপে তার বিরুদ্ধে তদন্ত আর বেশি দূর এগোয়নি। স্বাধীন তদন্ত কমিটির এক প্রতিবেদনেও শ্রীলঙ্কা সফরে যাওয়া এই ক্রিকেটারের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ আছে বলে জানা যায়।

নতুন চক্র, পুরোনো মুখ

আকু জানতে পেরেছে, এই ক্রিকেটার আগামী বিপিএলে নতুন মালিকানায় কারা আসছে, তা নিয়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছেন। গত জুন মাস থেকে তার কার্যকলাপের উপর কড়া নজর রাখা হচ্ছে। তার নজরদারির সূত্র ধরেই নতুন এই অভিযোগ সামনে এসেছে। গত ২০ জুলাই অভিযুক্ত সেই ক্রিকেটার তরুণ পেসারকে বাড়তি আয়ের লোভ দেখিয়ে কয়েকটি ম্যাচে বাইরের ‘প্রেসক্রিপশন’ অনুযায়ী খেলার প্রস্তাব দেন। লোভনীয় অর্থের বিনিময়ে চার-পাঁচটি ম্যাচে ফিক্সিং করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল তাকে।

অভিযোগ পাওয়ার পর থেকেই আকু অভিযুক্তর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে আসছিল। কিন্তু তার ফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। পরে হুমকি দিয়ে তাকে ফোন ধরতে বাধ্য করা হয় এবং বিসিবির অফিসে হাজিরা দিতে বলা হয়। গত পরশু সকালে প্রায় ৩০ মিনিট সেখানে অবস্থান করেন তিনি। এই বাঁহাতি স্পিনার গত বিপিএলে ঢাকা ক্যাপিটালসের হয়ে খেলেছিলেন এবং তার বিরুদ্ধে এর আগে কখনো এমন অভিযোগ ওঠেনি। তবে সর্বশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) তিনি অভিযোগকারী তরুণ পেসারের সতীর্থ ছিলেন।

তদন্তে বাধা, প্রশ্নবিদ্ধ বিসিবির ভূমিকা

এমন পরিস্থিতিতে বিসিবির অভ্যন্তরে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। বিসিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, একের পর এক এমন ঘটনা ঘটায় আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী বিভাগের কাছে এই তদন্ত হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। এই সময়েই ঢাকায় এসেছেন আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগের সাবেক প্রধান অ্যালেক্স মার্শাল। তবে তিনি কোনো তদন্তের কাজে বিসিবির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন না। বরং বিসিবির দুর্নীতিবিরোধী বিভাগকে আরও দক্ষ করে তুলতে এবং কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিতে তাকে আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিসিবির মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান ইফতেখার রহমান।

তবে এতে অপরাধীদের অপরাধ প্রমাণ করা যাবে কি না, তা নিয়ে বিসিবির অন্দরমহলেও সংশয় রয়েছে। কারণ, গত বিপিএলে দুজন হাই-প্রোফাইল খেলোয়াড়ের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলেও বোর্ডের শীর্ষ মহল থেকে তদন্ত থামিয়ে দেওয়ার নির্দেশ এসেছিল। সেই সময় একজন ৩৫ বছর বয়সী জাতীয় দলের ডানহাতি পেসার এবং শ্রীলঙ্কা সফরে যাওয়া আরও এক ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে কিছু প্রমাণ জোগাড় করা হয়েছিল। আগের তদন্ত থেমে যাওয়ায়ই কি এই ধরনের অপরাধীরা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠছে? বিপিএলের মতো একটি বড় টুর্নামেন্টের আগে এমন ঘটনা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে গভীর সংকটের মুখে ফেলছে।