প্রতিনিধি ১৯ অগাস্ট ২০২৫ , ১১:৫৬ এএম প্রিন্ট সংস্করণ
সান ফ্রান্সিসকো থেকে এএফপি জানায়, শিশুদেরকে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য তৈরি সংবেদনশীল আধেয় থেকে সুরক্ষা দিতে এবার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার শুরু করেছে ইউটিউব। বর্তমানে ইউটিউবের পাশাপাশি ইনস্টাগ্রাম ও টিকটকের মতো অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকেও শিশুদের সুরক্ষার বিষয়ে বিশেষ নজরদারিতে রাখা হচ্ছে।
গুগলের মালিকানাধীন এই জনপ্রিয় ভিডিও প্ল্যাটফর্মটি একটি নতুন ‘মেশিন লার্নিং’ নামের এআই পদ্ধতি ব্যবহার করছে, যা ব্যবহারকারীর বয়স অনুমান করতে সাহায্য করবে। ইউটিউবের ইয়ুথ বিভাগের প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট পরিচালক জেমস বেসারের মতে, এই প্রযুক্তি শিশুদের দেখা ভিডিওর ধরন এবং তাদের অ্যাকাউন্টের সক্রিয়তার সময়কাল বিশ্লেষণ করে বয়স নির্ধারণ করবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো প্রায়শই শিশুদের সুরক্ষায় ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগের মুখে পড়ে। এর প্রতিক্রিয়ায়, অনেক দেশ কঠোর আইন প্রণয়নের কথা ভাবছে। অস্ট্রেলিয়া এর মধ্যে অন্যতম। গত মাসে দেশটির যোগাযোগমন্ত্রী আনিকা ওয়েলস জানান, অস্ট্রেলিয়ায় প্রতি ১০ জন শিশুর মধ্যে চারজন ইউটিউবে ক্ষতিকর কনটেন্ট দেখার কথা স্বীকার করেছে। এই কারণে, অস্ট্রেলিয়া সরকার ১৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের ইউটিউব ব্যবহার নিষিদ্ধ করার একটি ঐতিহাসিক আইন প্রণয়ন করছে, যা আগামী ১০ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে। মন্ত্রী এই ক্ষতিকর আধেয় তৈরি করা অ্যালগরিদমগুলোকে ‘শিকারী অ্যালগরিদম’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
এই ধরনের কঠোর পদক্ষেপের কারণে ইউটিউব তাদের প্রযুক্তিগত সুরক্ষার দিকে আরও বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। নতুন এই এআই পদ্ধতিটি ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্টে উল্লিখিত জন্ম তারিখের ওপর নির্ভর না করে, তাদের আচরণের ওপর ভিত্তি করে বয়স উপযোগী আধেয় এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। জেমস বেসার বলেন, “এই প্রযুক্তি আমাদের ব্যবহারকারীর বয়স অনুমান করতে সহায়তা করবে। অ্যাকাউন্টে উল্লিখিত জন্ম তারিখ যাই থাকুক না কেন, বয়স উপযোগী আধেয় ও সুরক্ষা প্রদানে আমরা সেই তথ্য ব্যবহার করব।”
ইউটিউবের এই নতুন বয়স অনুমান ব্যবস্থাটি তাদের আগের প্রযুক্তির একটি উন্নত সংস্করণ। যদি কোনো ব্যবহারকারীকে অপ্রাপ্তবয়স্ক বলে মনে করা হয়, তাহলে তাকে বয়স যাচাই করার জন্য কিছু বিকল্প দেওয়া হবে। এর মধ্যে ক্রেডিট কার্ড, সেলফি অথবা সরকারি পরিচয়পত্র ব্যবহার করে বয়স নিশ্চিত করার সুযোগ থাকবে। ইউটিউব জানিয়েছে, এই প্রযুক্তিটি তারা কিছু সময় ধরে অন্যান্য বাজারে সফলভাবে ব্যবহার করে আসছে।
অস্ট্রেলিয়ার এই আইনকে বিশ্বের অন্যতম কঠোর ব্যবস্থা হিসেবে ধরা হচ্ছে। এই আইন কার্যকর হলে অনেক দেশই একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছে। তবে, অস্ট্রেলিয়ার এই প্রস্তাবের জবাবে ইউটিউব নিজেদের একটি ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দাবি করে, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে ভিন্ন। তাদের মতে, ইউটিউব একটি উন্নতমানের ভিডিও লাইব্রেরি, যা বর্তমানে টিভির পর্দায় আরও বেশি দেখা হচ্ছে।
তবে, অস্ট্রেলিয়ার কঠোর আইন প্রণয়নের কারণে অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন- ফেসবুক, টিকটক এবং ইনস্টাগ্রামও তাদের শিশুদের সুরক্ষার ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে ভাবছে। সব মিলিয়ে, এই পদক্ষেপগুলো শিশুদের অনলাইন সুরক্ষার ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে মনে করা হচ্ছে।