খেলাধুলা

প্রেমের ময়দান: মাঠের বাইরে ফুটবলারদের কেলেঙ্কারি!

  প্রতিনিধি ২০ অগাস্ট ২০২৫ , ১১:০৩ এএম প্রিন্ট সংস্করণ

প্রেমের ময়দান: মাঠের বাইরে ফুটবলারদের কেলেঙ্কারি!

ফুটবল মানে শুধু মাঠের লড়াই আর ট্রফি জয়ের গল্প নয়, এর বাইরেও রয়েছে প্রেম, বিশ্বাসঘাতকতা আর ঈর্ষার নানা নাটকীয় অধ্যায়। তারকা ফুটবলারদের ব্যক্তিগত জীবনের এসব কেলেঙ্কারি প্রায়শই জন্ম দেয় বড় আলোচনার, যা নাড়িয়ে দেয় পুরো ফুটবল বিশ্বকে। এই গল্পগুলোতে মিশে থাকে বন্ধুত্ব, বিচ্ছেদ এবং অপ্রত্যাশিত সম্পর্কের নানা দিক।

সবচেয়ে আলোচিত ঘটনার কেন্দ্রে আছেন আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার মাউরো ইকার্দি। তার সঙ্গে ওয়ান্দা নারার সম্পর্ক যখন শুরু হয়, তখন নারা ছিলেন ইকার্দিরই বন্ধু ও সতীর্থ ম্যাক্সি লোপেজের স্ত্রী। ২০১৩ সালে এই সম্পর্ক প্রকাশ্যে এলে জন্ম নেয় এক কুখ্যাত ত্রিভুজ প্রেমের। এই ঘটনার পর নারা লোপেজকে ডিভোর্স দিয়ে ছয় মাস পরই ইকার্দিকে বিয়ে করেন। এরপরও লম্বা সময় ধরে সিরি আ-তে ইকার্দি ও লোপেজের দলগুলো একে অপরের মুখোমুখি হয়েছে। ইতালিয়ান ফুটবলপ্রেমীরা এই লড়াইয়ের নাম দিয়েছিলেন ‘ওয়ান্দা ডার্বি’—যা তাদের সম্পর্কের নাটকীয়তাকে নতুন মাত্রা দেয়। তবে ইকার্দি-নারার সংসারও বেশি দিন টেকেনি। গত বছর তাদের বিচ্ছেদ হয় এবং ইকার্দি নতুন প্রেমিকা, আর্জেন্টাইন অভিনেত্রী চায়না সুয়ারেজকে সামনে নিয়ে আসেন। সম্প্রতি চায়না সুয়ারেজ ওয়ান্দা নারাকে উদ্দেশ্য করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি মন্তব্য করলে এই প্রেম-দ্বৈরথ আবারও আলোচনায় আসে।

ইংলিশ ফুটবলেও এমন কেলেঙ্কারি কম নয়। একসময় ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন কোলিন রুনি ও রেবেকা ভার্ডি, যারা ইংল্যান্ডের সাবেক দুই ফরোয়ার্ড ওয়েইন রুনি ও জেমি ভার্ডির স্ত্রী। তবে তাদের বন্ধুত্ব এখন শত্রুতায় রূপ নিয়েছে। কোলিনের অভিযোগ ছিল, রেবেকা তার ব্যক্তিগত তথ্য সংবাদমাধ্যমে ফাঁস করেছেন। এই ঘটনা আদালত পর্যন্ত গড়ায়, যা ‘ওয়াগাথা ক্রিস্টি’ নামে পরিচিত এবং ফুটবলের খবর ছাড়িয়ে জাতীয় আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

জন টেরির ঘটনাও ইংলিশ ফুটবলে বড় ঝড় তোলে। ২০১০ সালে অভিযোগ ওঠে, টেরি তার চেলসি ও ইংল্যান্ড জাতীয় দলের সতীর্থ ওয়েইন ব্রিজের সাবেক প্রেমিকা ভানেসা পেরোনসেলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন। বিবাহিত এবং দুই সন্তানের জনক হয়েও টেরির এই সম্পর্ক জানাজানি হলে প্রিমিয়ার লিগের এক ম্যাচে ব্রিজ তার সঙ্গে করমর্দন করতে অস্বীকৃতি জানান। এই দৃশ্য ফুটবল ইতিহাসের প্রেম-সংঘাতের এক প্রতীকী মুহূর্ত হয়ে আছে।

স্প্যানিশ কিংবদন্তি জেরার্দ পিকেও এই তালিকায় আছেন। তার এবং কলম্বিয়ান গায়িকা শাকিরার বিচ্ছেদ একসময় বিশ্বজুড়ে শিরোনাম হয়েছিল। সম্পর্ক এতটাই তিক্ত হয় যে, শাকিরা তার গানে পিকেকে উদ্দেশ্য করে তির্যক মন্তব্য করতে থাকেন। এই বিচ্ছেদের কারণ ছিলেন ক্লারা চিয়া মার্তি, যাকে পিকে নতুন প্রেমিকা হিসেবে ঘোষণা করেন। শাকিরার গানের কারণে ক্লারা মানসিক চাপে পড়ে কিছুদিন নিজেকে গৃহবন্দী করে রেখেছিলেন।

প্রেমিকাদের কারণে সম্প্রতি বার্সেলোনার দুই ফুটবলার গাভি ও ফেরমিন লোপেজও আলোচনায় এসেছেন। ইতালিয়ান সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, তাদের দুইজনের প্রেমিকা, আনা পেলাইয়ো ও বের্তা গায়ার্দোর মধ্যে ভালো সম্পর্ক নেই, যা তাদের দুজনের বন্ধুত্বে ফাটল ধরায়। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, ড্রেসিংরুমেও তাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এই ঘটনা প্রমাণ করে, ফুটবলারদের জীবনে মাঠের বাইরের এই সম্পর্কগুলো কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, যা তাদের ক্যারিয়ার এবং বন্ধুত্বকেও ঝুঁকিতে ফেলে।

ফুটবল তারকাদের জীবনের এসব ঘটনা আমাদের দেখায় যে, খেলার মাঠে যতই প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকুক না কেন, ব্যক্তিগত জীবনের সম্পর্কগুলোও কম নাটকীয় নয়। তাদের প্রেম, বিচ্ছেদ, এবং বিশ্বাসঘাতকতার গল্পগুলো ভক্তদের কাছে এক অন্যরকম আগ্রহের জন্ম দেয়, যা কেবল মাঠের পারফরম্যান্সের চেয়েও বেশি আলোচনার খোরাক জোগায়।