রাজনীতি

বাংলাদেশ ক্রিকেটে নতুন দিগন্ত: ‘শেয়ার অ্যান্ড কেয়ার’ বৈঠকে খেলোয়াড়দের সরাসরি মতামত নিলো বিসিবি

  প্রতিনিধি ২০ অগাস্ট ২০২৫ , ৩:০৮ পিএম প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশ ক্রিকেটে নতুন দিগন্ত: 'শেয়ার অ্যান্ড কেয়ার' বৈঠকে খেলোয়াড়দের সরাসরি মতামত নিলো বিসিবি

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ক্রিকেটের উন্নয়নে একটি নতুন এবং সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে। গতকাল রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল, জাতীয় দলের ক্রিকেটার, কোচিং স্টাফ এবং বোর্ড কর্মকর্তারা এক ঐতিহাসিক বৈঠকে মিলিত হন। দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা এই আলোচনা সভার মূল লক্ষ্য ছিল খেলোয়াড়দের বাস্তব সমস্যাগুলো শোনা এবং তাদের উন্নতির জন্য বোর্ডের করণীয় নির্ধারণ করা। বিসিবি এই সেশনের নাম দিয়েছে ‘শেয়ার অ্যান্ড কেয়ার’

সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে বৈঠকটি শেষ হয় বিকেল ৩টায়। এই সময়ে খেলোয়াড়, কোচ এবং বোর্ড কর্মকর্তারা তিনটি আলাদা দলে বিভক্ত হয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন। বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল জানিয়েছেন, এই প্রোগ্রামে প্রতিটি পক্ষের পারফরম্যান্স, ঘাটতি এবং উন্নতির দিক নিয়ে লিখিত মতামত সংগ্রহ করা হয়েছে। তিনি বলেন, “খেলোয়াড়েরা শুধু মাঠেই নন, বোর্ডের চোখে তারা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।”

খেলোয়াড়দের সমস্যা ও সমাধানের পথ

 

বৈঠকে ক্রিকেটাররা মাঠের খেলার বাইরেও নানা বিষয় নিয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন। লজিস্টিক সাপোর্ট, উন্নত অনুশীলন সুবিধা, চিকিৎসাসেবা এবং পিচের মানোন্নয়ন—এই সবকিছু নিয়ে তারা সরাসরি কথা বলেছেন। বিসিবি সভাপতির মতে, এ ধরনের আলোচনার মধ্য দিয়ে বোর্ডের পক্ষে খেলোয়াড়দের প্রকৃত চাহিদা বোঝা সহজ হবে। আগামী দিনে প্রতি তিন মাস পর পর এ ধরনের সেশন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ম্যাচ ফিক্সিং ও ডোপিংয়ের মতো গুরুতর বিষয়ও আলোচনায় স্থান পেয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) কর্মকর্তা অ্যালেক্স মার্শাল এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এবং খেলার সততা রক্ষা ও অ্যান্টি-ডোপিং প্রক্রিয়া আরও কঠোর করার বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। সভাপতি জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহে ফিক্সিং সম্পর্কিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আসার পর বিসিবি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

 

ঘরোয়া ও নারী ক্রিকেটের উন্নয়ন

 

শুধুমাত্র জাতীয় দল নয়, দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়েও মতামত দিয়েছেন সিনিয়র খেলোয়াড়রা। বিশেষ করে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ (ডিপিএল) চলাকালীন বিকেএসপিতে যে সমস্যা হয়, তা তুলে ধরা হয়েছে। নারী ক্রিকেট নিয়েও আলোচনা হয়েছে। আসন্ন বিশ্বকাপের জন্য নারী দল বিকেএসপিতে অনুশীলন করলেও, সেটিকে যথাযথ মনে করছেন না সভাপতি। তিনি জানান, খুব শিগগিরই নারী ক্রিকেটারদের সঙ্গেও একটি আলাদা বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

আলোচনা শেষে বিসিবি সভাপতি গণমাধ্যমকেও ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, “খেলাটিকে সঠিকভাবে এগিয়ে নিতে মিডিয়ার ইতিবাচক সমালোচনা অপরিহার্য।” তিনি সাংবাদিকদের ক্রিকেটের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে উল্লেখ করে তাদের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

 

সবার চোখে আশার আলো

 

এই খোলামেলা আলোচনায় ক্রিকেটাররাও বেশ সন্তুষ্ট। বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক লিটন কুমার দাস ধারাবাহিকতা ও প্রক্রিয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, “খেলোয়াড়দের কঠোর পরিশ্রম সবাই দেখে, কিন্তু এর পেছনের প্রক্রিয়া চোখে পড়ে না। মূল বিষয় হলো সততার সঙ্গে চেষ্টা করা এবং যাত্রাপথে আস্থা রাখা।”

ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ বলেছেন, খেলোয়াড়দের জন্য সবচেয়ে জরুরি হলো সারাবছর ভালো সহায়তা পাওয়া। তিনি স্থানীয় সাপোর্ট স্টাফদের উন্নয়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছেন।

জাতীয় দলের প্রধান কোচ ফিল সিমন্স বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশের ক্রিকেটে অসাধারণ প্রতিভা আছে, যা কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে আরও উজ্জ্বল হতে পারে। তিনি বলেন, “দীর্ঘমেয়াদি সাফল্যের জন্য প্রয়োজন একসঙ্গে কাজ করা, একে অপরকে সহায়তা করা এবং একটি যৌথ লক্ষ্য ঠিক রাখা।”

এই বৈঠকের মাধ্যমে বিসিবি এবং খেলোয়াড়দের মধ্যে বোঝাপড়া আরও দৃঢ় হবে বলে আশা করা যায়, যা বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎকে আরও উজ্জ্বল করবে।