প্রতিনিধি ২১ অগাস্ট ২০২৫ , ১১:৪০ এএম প্রিন্ট সংস্করণ
নিউইয়র্ক, ইউএসএ: ইউএস ওপেনের মিশ্র দ্বৈতের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। ইতালির দুই তারকা সারা এরানি ও আন্দ্রেয়া ভাভাসোরি টানা দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জিতে তাঁদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করলেন। বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার সকালে এক রোমাঞ্চকর ফাইনালে তাঁরা তৃতীয় বাছাই জুটি ইগা সিওনতেক ও ক্যাসপার রুডকে পরাজিত করে এই অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেন। ম্যাচের ফলাফল ছিল ৬-৩, ৫-৭ (১০-৬)।
ফাইনালে এরানি ও ভাভাসোরি প্রথম সেট ৬-৩ গেমে জিতে দুর্দান্ত শুরু করেন। কিন্তু দ্বিতীয় সেটে ফিরে আসে সিওনতেক ও রুড জুটি। কঠিন লড়াইয়ের পর তাঁরা দ্বিতীয় সেট ৫-৭ গেমে জিতে ম্যাচকে টাইব্রেকারে নিয়ে যান। তৃতীয় সেটে স্নায়ুচাপের এই লড়াইয়ে এরানি ও ভাভাসোরি শেষ পর্যন্ত ১০-৬ ব্যবধানে জিতে শিরোপা নিশ্চিত করেন। টানা দুই দিনে চারটি ম্যাচ জিতে শিরোপা হাতে তুলে নেন তাঁরা, যা তাঁদের দৃঢ়তা ও পারফরম্যান্সের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
নতুন ফরম্যাট, পুরোনো চ্যাম্পিয়ন
এবছর মিশ্র দ্বৈত টুর্নামেন্টের নতুন ফরম্যাট নিয়ে অনেকেই আপত্তি তুলেছিলেন, যার মধ্যে এরানি ও ভাভাসোরি নিজেও ছিলেন। মূল টুর্নামেন্টের এক সপ্তাহ আগে শুরু হওয়া এই টুর্নামেন্টের উদ্দেশ্য ছিল একক খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণের সুযোগ বাড়ানো এবং দর্শকদের মধ্যে ডাবলস ম্যাচের প্রতি আগ্রহ তৈরি করা। আয়োজকরা ভেবেছিলেন এতে আলকারাজ, জোকোভিচ, সিওনতেকের মতো তারকাদের নাম যুক্ত হবে, যা টুর্নামেন্টকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে।
এবং আয়োজকদের এই পরিকল্পনা সফলও হয়েছিল। কার্লোস আলকারাজ, এমা রাদুকানু, নোভাক জোকোভিচ, ইগা সিওনতেক এবং ক্যাসপার রুডের মতো বিশ্বসেরা খেলোয়াড়রা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত শিরোপা গেল সেই ‘প্রকৃত’ ডাবলস বিশেষজ্ঞদের হাতেই। এটি প্রমাণ করে যে, ফরম্যাট যাই হোক না কেন, বিশেষায়িত দক্ষতা সবসময়ই সাফল্যের চাবিকাঠি।
সবচেয়ে আলোচিত জুটি ছিলেন কার্লোস আলকারাজ ও এমা রাদুকানু, কিন্তু তাঁরা প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নেন। একই ভাগ্য বরণ করতে হয় নোভাক জোকোভিচ ও তাঁর সঙ্গী ওলগা দানিলোভিচকে। এই অপ্রত্যাশিত বিদায়গুলো টেনিসপ্রেমীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
চ্যাম্পিয়নদের প্রাপ্তি
এই ঐতিহাসিক জয়ের পর এরানি ও ভাভাসোরির মুখে ছিল শুধু হাসি আর আনন্দের আলিঙ্গন। নতুন ফরম্যাট নিয়ে তাদের পুরোনো আপত্তি যেন মুহূর্তে উধাও হয়ে গেল। কারণ এবারের চ্যাম্পিয়নদের জন্য প্রাইজমানি ছিল বিশাল—এক মিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১২ কোটি টাকা। গতবারের চেয়ে এই প্রাইজমানি ছিল অনেক বেশি, যা এই জয়কে আরও মধুর করে তুলেছে।
আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামে গ্যালারিভর্তি দর্শক ও উৎসবের আবহ দেখে মনে হচ্ছিল যেন এটি কোনো গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনালের একক ম্যাচ। সাধারণত ডাবলস ম্যাচে এমন দৃশ্য দেখা যায় না। আয়োজকদের নতুন ফরম্যাট অন্তত দর্শকদের মাঝে ডাবলস টুর্নামেন্টের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে সফল হয়েছে। এটি ভবিষ্যৎ ডাবলস টেনিসের জন্য একটি ইতিবাচক দিক।
এই জয়ের মধ্য দিয়ে এরানি ও ভাভাসোরি জুটি শুধু তাদের শিরোপা ধরে রাখলেন না, বরং প্রমাণ করলেন যে ধারাবাহিকতা এবং বিশেষায়িত দক্ষতা দিয়ে যেকোনো বাধা অতিক্রম করা সম্ভব। তাঁদের এই সাফল্য টেনিসের ইতিহাসে এক নতুন মাইলফলক হয়ে থাকবে।