প্রতিনিধি ২১ অগাস্ট ২০২৫ , ১২:৩৮ পিএম প্রিন্ট সংস্করণ
রাজধানীর খুচরা বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যেন আকাশ ছুঁয়েছে। ডিম থেকে শুরু করে সবজি—সবকিছুর দামই সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। মাত্র এক হালি ডিম এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, আর এক ডজন কিনতে গেলে গুনতে হচ্ছে ১৫০ টাকা। সবজির বাজারও একই চিত্র। কাঁচা পেঁপে ছাড়া অন্য কোনো সবজি ৭০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না।
নিত্যপণ্যের এমন অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ জানতে সম্প্রতি রাজধানীর কারওয়ান বাজার, বসুন্ধরার জগন্নাথপুর বাজার এবং জোয়ার সাহারা কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, সবজির বাজারে ক্রেতাদের মুখে হতাশার ছাপ। বিক্রেতারা বলছেন, টানা বৃষ্টির কারণে ফসলের মাঠে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। কৃষকেরা ঠিকমতো সবজি তুলতে পারছেন না, যার ফলে বাজারে পণ্যের সরবরাহ কমে গেছে।
সবজির উচ্চমূল্য মধ্যবিত্তের জন্য বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজারে প্রতি কেজি পটল ৮০ থেকে ১০০ টাকা, টমেটো ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা, করলা ১০০ থেকে ১২০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা এবং শসা, ঝিঙ্গা ও ধুন্দল ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এমনকি শীতের সবজি ফুলকপি ও মুলাও বাজারে পাওয়া গেলেও সেগুলোর দাম তুলনামূলক অনেক বেশি। একটি ফুলকপি ১২০ টাকা এবং প্রতি কেজি মুলা ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
একইভাবে কাঁচা মরিচের দামও বেশ চড়া। বর্তমানে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ২০০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা কয়েক দিন আগেও ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। অন্যান্য সবজির মধ্যে এক পিস চালকুমড়া ৭০ টাকা, লাউ ১০০ টাকা, প্রতি কেজি মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, বেগুন মানভেদে ১০০ থেকে ১৮০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ৪০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ টাকা, কচুর মুখি ৮০ টাকা এবং ঢ্যাঁড়স ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শুধু সবজি নয়, শাকের দামও বেড়েছে। এক আঁটি পুঁইশাক ৪০ টাকা, ডাঁটাশাক ৩০ টাকা এবং কচু ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে গাজর ১৪০ টাকা এবং আলু ২৫ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যগুলো কিনতে গিয়ে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের মানুষেরা হিমশিম খাচ্ছেন।
এই মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কথা বললে কারওয়ান বাজারের এক সবজি বিক্রেতা বলেন, “এখন বৃষ্টি হচ্ছে, তাই উৎপাদন কম। শীত এলে দাম কমে যাবে। এখানে কাউকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। সরকার চাইলেও খুব বেশি কিছু করতে পারবে না।”
ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে এক ডিম বিক্রেতা বলেন, “আড়তদারেরা দাম বেশি রাখলে আমরা কী করব? বেশি দামে কিনে তো বেশি দামেই বেচতে হবে।”
এ ধরনের অজুহাতে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়াকে ক্রেতারা অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি হিসেবে দেখছেন। বাজারে কেনাকাটা করতে আসা এক বেসরকারি চাকরিজীবী বললেন, “পটল আর করলা কিনলাম। দাম অনেক বেশি মনে হলো। বিক্রেতারা বৃষ্টি-বন্যার কথা বলে দাম বাড়ার কারণ দেখাচ্ছেন, কিন্তু আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য জিনিসপত্র কেনা এখন অনেক কঠিন হয়ে গেছে।”
এমনিতেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়েছে। তার ওপর বৃষ্টির কারণে সরবরাহ কম থাকার অজুহাতে নিত্যপণ্যের দাম আরও বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। এই পরিস্থিতি থেকে কবে মুক্তি মিলবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছে সাধারণ ক্রেতারা।