ইউকেএম বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পেলেন অধ্যাপক ইউনূস

কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়া: সামাজিক ব্যবসার প্রসারে অনন্য অবদানের জন্য নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে মালয়েশিয়ার ইউকেএম বিশ্ববিদ্যালয় (Universiti Kebangsaan Malaysia)। বুধবার (১৩ আগস্ট) কুয়ালালামপুরের ইউকেএম বিশ্ববিদ্যালয় অডিটোরিয়ামে এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের কাছ থেকে তিনি এই সনদ গ্রহণ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অধ্যাপক ইউনূসের উদ্ভাবিত সামাজিক ব্যবসার মডেল বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্য বিমোচন ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তাঁর এই অসামান্য অবদানকে স্বীকৃতি জানাতেই তাঁকে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। সনদ গ্রহণ করে অধ্যাপক ইউনূস তাঁর বক্তব্যে ইউকেএম বিশ্ববিদ্যালয়কে ধন্যবাদ জানান এবং সামাজিক ব্যবসার দর্শন ও এর কার্যকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, প্রচলিত ব্যবসা ব্যবস্থার পাশাপাশি সামাজিক ব্যবসার প্রসার ঘটাতে পারলে সমাজের অনেক জটিল সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।

এর আগে সকালে অধ্যাপক ইউনূস অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে তাঁকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর তাঁকে স্বাগত জানান। অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়ার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, নীতিনির্ধারক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং বাংলাদেশ থেকে আগত তাঁর সফরসঙ্গীরা উপস্থিত ছিলেন।

তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে মালয়েশিয়ায় রয়েছেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের আমন্ত্রণে গত সোমবার (১১ আগস্ট) তিনি কুয়ালালামপুরে পৌঁছান। সফরের দ্বিতীয় দিন, মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) তিনি কুয়ালালামপুরের পুত্রজায়ায় প্রধানমন্ত্রীর অফিসে আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা হয়। পরে দুই নেতার উপস্থিতিতে বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা বাড়াতে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এবং তিনটি নোট বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিগুলো উভয় দেশের জন্যই নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অধ্যাপক ইউনূসের এই সফরটি শুধু সম্মানসূচক ডিগ্রি গ্রহণেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এটি বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করেছে। তাঁর উপস্থিতি উভয় দেশের জনগণের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং সহযোগিতার মনোভাব বৃদ্ধি করেছে।

বুধবার (১৩ আগস্ট) সম্মাননা গ্রহণ এবং মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সাথে সফল বৈঠকের পর অধ্যাপক ইউনূসের দেশে ফেরার কথা রয়েছে। এই সফরটি সামাজিক ব্যবসা এবং দারিদ্র্য বিমোচনে তাঁর বিশ্বব্যাপী প্রভাবের একটি নতুন উদাহরণ স্থাপন করল। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব হিসেবে তাঁর এই সম্মাননা দেশের জন্য গর্বের বিষয় ।