ক্রিকেটারদের চিকিৎসার নতুন দিগন্ত: বিসিবির অভিনব উদ্যোগ!

বাংলাদেশ ক্রিকেটে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে। ক্রিকেটারদের চিকিৎসা সেবার মানোন্নয়নে যুগান্তকারী এক পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সম্প্রতি বিসিবির মেডিকেল বিভাগ থেকে বোর্ডে পাঠানো হয়েছে একটি নতুন প্রস্তাব, যার মূল লক্ষ্য হলো ক্রিকেটারদের চিকিৎসার জন্য সুনির্দিষ্ট ও দ্রুত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। এই প্রস্তাবে ক্রিকেটারদের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে তাদের চিকিৎসার জন্য দেশ নির্ধারণ করে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যা তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

 

ক্যাটাগরিভিত্তিক চিকিৎসা: কেন এই পরিবর্তন?

 

বর্তমান ব্যবস্থায় ক্রিকেটারদের চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানোর প্রক্রিয়াটি প্রায়শই সিদ্ধান্তহীনতা এবং জটিলতার শিকার হয়। এই সমস্যা দূর করতে বিসিবির মেডিকেল বিভাগ একটি সুচিন্তিত পরিকল্পনা নিয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, ক্রিকেটারদের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করা হবে এবং প্রতিটি ক্যাটাগরির জন্য নির্দিষ্ট কিছু দেশ নির্ধারণ করা হবে। এতে করে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত দ্রুত নেওয়া যাবে এবং প্রক্রিয়াটি সহজ হবে। যদিও চোটের ধরন এবং উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন অনুযায়ী ক্রিকেটারদের অন্য দেশেও পাঠানো যেতে পারে, তবে নির্ধারিত দেশগুলোতেই তাদের চিকিৎসা করানো হবে। এই ক্যাটাগরিকরণের কাজটি পরিচালনা করবে ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগ।

 

কাতারের এসপেটার হাসপাতাল: বিশ্বমানের চিকিৎসা এখন হাতের মুঠোয়

 

বিসিবি জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের চিকিৎসার জন্য কাতারের এসপেটার হাসপাতালকে বিশেষভাবে প্রাধান্য দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এই সিদ্ধান্তের পেছনে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। প্রথমত, সম্প্রতি ক্রিকেটারদের বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে গিয়ে ভিসা সংক্রান্ত জটিলতার সম্মুখীন হয়েছে বিসিবি। কাতারের ভিসা প্রক্রিয়া তুলনামূলকভাবে সহজ, যা সময় বাঁচাবে এবং প্রক্রিয়াকে গতিশীল করবে।

দ্বিতীয়ত, এসপেটার হাসপাতাল ক্রীড়াবিদদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিশ্বজুড়ে সুপরিচিত। ২০০৯ সালে ফিফা এই হাসপাতালকে ‘ফিফা মেডিকেল সেন্টার ফর এক্সিলেন্স’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এরপর ২০১৪ সালে এটি ‘অ্যাথলেটদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও চোট প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) গবেষণা সেন্টার’ হিসেবেও প্রত্যয়ন লাভ করে। এই হাসপাতালের সুনাম এতটাই যে, ২০১৯ সালে বিবিসির এক প্রতিবেদনে একে ‘স্পোর্টস মেডিসিন বিশ্বের জন্য নাসার মিশন নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র’ বলে অভিহিত করা হয়েছিল।

এসপেটার হাসপাতালের এই খ্যাতি কেবল স্বীকৃতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বহু বিশ্বখ্যাত ক্রীড়াবিদ এখানে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। ২০২৩ সালে ব্রাজিলিয়ান ফুটবল তারকা নেইমার তার পায়ের অস্ত্রোপচার এই হাসপাতালেই করান। এছাড়াও অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া, মো ফারাহ, এবং ইয়া ইয়া তোরের মতো তারকা ক্রীড়াবিদও এখানে চিকিৎসা নিয়েছেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের জন্যও এটি নতুন নয়। ২০২৩ সালে অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন পিঠের চোট নিয়ে এখানে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। এছাড়াও অভিষেক দাস ও আশিকুর জামানও এই হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন।

 

মিরপুরে ‘মিনি মেডিকেল ইউনিট’ ও আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা

 

বিসিবি শুধু বিদেশেই নয়, দেশের অভ্যন্তরেও ক্রিকেটারদের চিকিৎসার মান উন্নত করতে বদ্ধপরিকর। এরই অংশ হিসেবে, মেডিকেল বিভাগ বিসিবির একাডেমি ভবনে একটি ‘মিনি মেডিকেল ইউনিট’ স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছে। বর্তমানে তাদের কার্যক্রম বিসিবি ভবনের ভেতরে চলে, কিন্তু ম্যাচ চলাকালীন দুর্নীতিবিরোধী ইউনিটের (ACU) বিধিনিষেধের কারণে ক্রিকেটাররা সেখানে যেতে পারেন না। এই সমস্যা সমাধানের জন্য একাডেমি ভবনে মেডিকেল বিভাগের সব কার্যক্রম স্থানান্তরিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। যেহেতু জিম এবং একাডেমি মাঠ কাছেই, তাই ক্রিকেটারদের পুনর্বাসনের জন্যও এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত কার্যকর হবে।

বিসিবির মেডিকেল বিভাগের প্রধান মনজুর আলম জানিয়েছেন, তারা বিদেশি চিকিৎসক এনে স্থানীয় ফিজিওদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি, আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনসহ আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম ব্যবহার করে মিরপুরেই ক্রিকেটারদের প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে চান। বিসিবির এই বহুমুখী উদ্যোগ ক্রিকেটারদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও দীর্ঘমেয়াদী ফিটনেস নিশ্চিত করতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করা যায়। এই উদ্যোগগুলো বাস্তবায়িত হলে ক্রিকেটারদের চোট থেকে দ্রুত সেরে ওঠা এবং মাঠে আরও দীর্ঘ সময় ধরে ভালো পারফর্ম করা সম্ভব হবে।