তৃপ্তি দিমরি: ‘অভিনেত্রী হওয়ার জন্য মরতেও রাজি ছিলাম’

ধড়ক ২’ ছবির মুক্তির পর অভিনেত্রী তৃপ্তি দিমরি এখন আলোচনায়। সম্প্রতি মুম্বাইয়ের জুহুর সান অ্যান্ড স্যান্ড হোটেলে এক আড্ডায় তিনি ফিরে গিয়েছিলেন তাঁর জীবনের সেই শুরুর দিনগুলোয়। তাঁর জীবনের যাত্রাটা সহজ ছিল না। অভিনয়জগতে তাঁর কোনো পূর্বপরিচিতি ছিল না। কিন্তু শুধু অভিনেত্রী হওয়ার বাসনা বুকে নিয়ে উত্তরাখণ্ড থেকে একাই পাড়ি জমিয়েছিলেন মায়ানগরী মুম্বাইয়ে।

আবেগপ্রবণ কণ্ঠে তৃপ্তি বলেন, “আমার অভিনীত চরিত্র ‘বিধি’র মতোই আমি সাহসী। সেই সাহস নিয়েই ঘরবাড়ি, চেনা শহর ছেড়ে মুম্বাইয়ের মতো অচেনা এক শহরে এসেছিলাম। পরিবারের সবার অমতে অভিনেত্রী হতে চেয়েছিলাম। আসলে আমার অভিনয়জগতে আসা নিয়ে তাঁরা ভয়ে ছিলেন। কিন্তু আমার আত্মবিশ্বাস ছিল। জানতাম সঠিক পথেই হাঁটছি।” তৃপ্তি দৃঢ়তার সাথে আরও বলেন, “মানুষের নিজের প্রতি বিশ্বাস থাকা খুব জরুরি। তখন মনে হয়েছিল, অভিনেত্রী হওয়ার জন্য জীবনে মরতেও রাজি।”

তৃপ্তি জানান, চরিত্রের সাহসিকতার দিকটি ছাড়া বিধির সঙ্গে তাঁর তেমন কোনো মিল নেই। তিনি বলেন, “পরিচালক শাজিয়াকে বলেছিলাম আমি বিধির মতো বহির্মুখী নই, খুবই শান্ত স্বভাবের, অন্তর্মুখী মেয়ে। ঝামেলা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে চাই।” তবে ‘বিধি’ চরিত্রটি তৃপ্তিকে মানুষ হিসেবে কিছুটা বদলে দিয়েছে। এখন তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস পান। তিনি মনে করেন, প্রতিটি মানুষেরই উচিত অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা।

২০১৮ সালে মুক্তি পেয়েছিল জাহ্নবী কাপুর ও ঈশান খাট্টার অভিনীত ‘ধড়ক’। রোমান্টিক-ট্র্যাজেডি ছবিটি ভালো সফলতা পেয়েছিল। তাই সিকুয়েল মুক্তির আগে কি কোনো চাপ অনুভব করেছিলেন তৃপ্তি? তাঁর উত্তর ছিল, “কোনো সিনেমা মুক্তির আগে আমি কোনো প্রকার চাপ নিই না। এতে অভিনয়ের আনন্দটাই মাটি হয়ে যায়। সেটে যদি চাপ নিয়ে হাজির হন, তাহলে চরিত্রের প্রতি কিছুতেই ন্যায় করতে পারবেন না। ছবিটা হিট হবে নাকি ফ্লপ, তা না ভেবে সমগ্র প্রক্রিয়াটা উপভোগ করা জরুরি।”

‘ধড়ক ২’ ছবিতে একদিকে আবেগ-রোমান্স, অন্যদিকে জাতপাত ও বর্ণবাদের মতো সামাজিক বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে। তৃপ্তি জানান, এই ছবিটি তাঁকে অনেক অজানা বিষয় সম্পর্কে জানতে সাহায্য করেছে। তিনি বলেন, “সিনেমা মানুষকে নানাভাবে সমৃদ্ধ করে। আমরা রোজকার জীবনের অনেক বিষয় সম্পর্কে অজ্ঞ থাকি। জানতেও পারি না যে অন্যের ওপর দিয়ে কী ঝড় বয়ে যাচ্ছে। অনেক সময় আমরা অন্যের প্রতি সংবেদনশীল হতে পারি না। আমি বিশ্বাস করি, সিনেমা মানুষের মনে গভীর প্রভাব ফেলে। ‘ধড়ক ২’ যদি কিছু মানুষের মানসিকতায় বদল আনতে পারে, তাহলেই আমরা সফল।”

এই ছবিতে সিদ্ধান্ত চতুর্বেদীর সঙ্গে তৃপ্তির রসায়ন দর্শকের মন কেড়েছে। এই রসায়নের পেছনের কারণও জানালেন তিনি। পরিচালক শাজিয়া চেয়েছিলেন তাঁরা একে অপরকে গভীরভাবে অনুভব করবেন। তাই দীর্ঘ ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হয়েছিল। শুধু সিদ্ধান্তের সঙ্গে নয়, ছবির অন্য অভিনেতাদের সঙ্গেও যেন সখ্য তৈরি হয়, তা চেয়েছিলেন শাজিয়া। কলেজের শিক্ষার্থীদের মতো তাঁরা একসঙ্গে আড্ডা দিতেন, গেম খেলতেন। এভাবেই একে অপরের সঙ্গে সহজ হতে পেরেছিলেন।

আট বছরের অভিনয়জীবনে তৃপ্তি ‘বুলবুল’ ও ‘কলা’র মতো প্রশংসিত চলচ্চিত্র উপহার দিয়েছেন। তিনি জানান, ক্যারিয়ারের প্রথম দুটি ছবি ‘পোস্টার বয়েজ’ এবং ‘লায়লা মজনু’ বক্স অফিসে ভালো ব্যবসা না করলেও তিনি শতভাগ দিয়ে কাজ করেছিলেন। তিনি বলেন, “আমি প্রতিটি চরিত্রের প্রতি সমানভাবে নিবেদিত। নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে শুরু থেকেই সচেতন। কিছু ছবি চলেছে, কিছু চলেনি। এসব না ভেবে মনপ্রাণ দিয়ে কাজ করে যেতে চাই।”

সময় যত যাচ্ছে, তৃপ্তি নিজেকে একজন অভিনেত্রী হিসেবে আরও উন্নত মনে করছেন। তিনি তাঁর ফিল্মি যাত্রা নিয়ে ভীষণ খুশি। তিনি বলেন, “এই যাত্রার কোনো কিছু বদলাতে চাই না। পথে অনেক ভুল করেছি, যা সময়ের সঙ্গে শুধরে নিয়েছি। তবে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েই আমার আক্ষেপ নেই।